back to top
বুধবার, জুলাই ২৩, ২০২৫
HomeLifestyleHealthy Livingঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন? এক ভয়াবহ অভ্যাস যা নীরবে ধ্বংস করছে আপনার...

ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন? এক ভয়াবহ অভ্যাস যা নীরবে ধ্বংস করছে আপনার শরীর ও মন

“রাত ১২টা বাজে—ঘুমাবার কথা। কিন্তু সোফায় শুয়ে স্ক্রল করতে করতে কখন যেন ১টা বেজে যায়! চোখ জ্বলে, মাথা ধরে। কিন্তু ফোনটা নামাতেই ইচ্ছা করে না।”

এই অভ্যাসটা কি শুধু আপনার? একদম নয়। আজকের বাংলাদেশে শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই ঘুমানোর বিছানায় ফোনের জাদু চলছে। অথচ এই ফোন-ঘুম বন্ধনটাই হয়ে উঠেছে শরীর, ঘুম, ও মানসিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় শত্রু।

ফোন নিয়ে ঘুমালে ঠিক কী ক্ষতি হয়?

অনেকেই ভাবেন, “ঘুমানোর আগে একটু রিল দেখা, ফেসবুক স্ক্রল করায় সমস্যা কী?”

আসলে সমস্যা অনেক। বিশেষ করে যখন এই অভ্যাসটা প্রতিদিনকার রুটিনে ঢুকে যায়।

১. ঘুমের গুণমান নষ্ট হয়

ফোনের স্ক্রিন থেকে আসা ব্লু লাইট আপনার মস্তিষ্কের মেলাটোনিন (ঘুমের হরমোন) নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়।

ফলে আপনি ঘুমাতে পারেন, কিন্তু গভীর ঘুম (deep sleep) হয় না।

এর ফলে—

  • সকালে ঘুম ভাঙার পরেও ক্লান্ত লাগে
  • মাথা ভারী মনে হয়
  • সারাদিন মনোযোগে সমস্যা হয়

২.  ঘুমের সময় দেরি হয়

“আরও ৫ মিনিট!” বলতে বলতে ২ ঘণ্টা কেটে যায়। রাতে ঘুমানোর সময়টা পিছিয়ে গেলে পরের দিন ঘুম অপূর্ণ থেকে যায়, ঘুমচক্র (sleep cycle) পুরোপুরি নষ্ট হয়।

৩. অতিরিক্ত স্টিমুলেশন

ঘুমানোর আগে যদি আপনি কোনো উত্তেজনাকর কনটেন্ট (নিউজ, রাজনৈতিক বিতর্ক, ভয়াবহ ভিডিও) দেখেন, তা আপনার মস্তিষ্ককে অতিমাত্রায় সক্রিয় করে তোলে। ফলাফল? মস্তিষ্ক ঘুমাতে চায় না, আপনি অজান্তেই উদ্বিগ্ন থাকেন।

গবেষণায় যা দেখা গেছে

  • স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮২% মানুষ ফোন বিছানায় নিয়ে যান
  • তাদের মধ্যে ৫৫% মানুষ বলেন, ঘুমাতে দেরি হয় ফোনের কারণে
  • একাধিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, বিছানায় ফোন ব্যবহার মানেই ঘুমের গুণমান কমে যাওয়া + মানসিক চাপ বাড়া

ফোন ঘুমের শত্রু—তবে বিকল্প কী?

আমরা কেউই বলছি না আপনি প্রযুক্তি বাদ দিন। কিন্তু ঘুমের আগে আপনি যদি নিজের মস্তিষ্ককে ‘বিরতি’ না দেন, তাহলে আপনার শরীর নিজে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তাই দরকার কিছু স্মার্ট অভ্যাস:

 ঘুমের ৩০–৬০ মিনিট আগে ফোন স্ক্রিন থেকে বিরতি নিন

“Screen-Off Zone” তৈরি করুন—রাত ১০টার পর ফোন হাতে না নেওয়ার চেষ্টা করুন। ফোন যদি প্রয়োজন হয় (অ্যালার্ম সেট করা, ইত্যাদি), তবে ‘Do Not Disturb’ মোডে রাখুন।

 ঘুমানোর আগে ৩টি ভালো বিকল্প

  1. বই পড়া – হালকা, মনশান্তির বই ঘুমের আগে মস্তিষ্ককে শান্ত করে
  2. নিঃশ্বাসের ব্যায়াম বা মেডিটেশন – ৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেওয়া-ছাড়া
  3. জার্নাল লেখা – সারাদিনের ৩টি ভালো ঘটনা লিখুন, মনের ভার হালকা হবে

ফোনের জায়গায় ব্যবহার করুন analog ঘড়ি

অনেকেই বলেন, “ফোনে অ্যালার্ম আছে, তাই দরকার।” তবে আপনি চাইলে ৩০০-৪০০ টাকায় একটা analog alarm clock কিনে নিতে পারেন—যেটা চোখে আলো ফেলে না, মনও কাড়ে না।

ঘুম মানেই বন্ধ থাকা নয়, এটা শরীরের রিফ্রেশ বোতাম

আপনি সারাদিন পরিশ্রম করেন, দৌড়ান—ঘুমই আপনার একমাত্র রিচার্জ টাইম। আর সেই ঘুমটাই যদি ফোনের কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সারাদিনের পরিশ্রমের ফল তো হারিয়ে যায়!

আজ রাত থেকেই চ্যালেঞ্জ নিন:

ফোন ছাড়া ঘুমাবেন ৭ দিন। দেখবেন, ঘুমের গুণমান শুধু নয়, আপনার মুড, এনার্জি, ফোকাস—সব কিছুই বদলে যাবে। ঘুমে শান্তি আনুন, ফোন নয়। নিজের শরীরকে তার প্রাপ্য বিশ্রাম দিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular