চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ এসেছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী ড. আবু আলী ইবনে সিনার হাত ধরে। মাত্র ১০ মিনিটে ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে এমন একটি ডিভাইস আবিষ্কার করে তিনি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এই অভূতপূর্ব প্রযুক্তি শুধু সময়ই বাঁচাবে না, বরং চিকিৎসা খরচ কমাবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত, যা কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।
কে এই ড. আবু আলী ইবনে সিনা?
চাঁদপুরের বাবুরহাটের সন্তান ড. আবু আলী ইবনে সিনা বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতাও করেছেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসে (যা বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ১৯তম অবস্থানে রয়েছে) বায়োমেডিকেল সায়েন্স বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ও গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নিজের নামে ‘সিনা ল্যাব’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গবেষকরা তাঁর তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন।
কীভাবে কাজ করে এই ডিভাইস?
ড. সিনা ‘ডেভেলপমেন্ট অব পয়েন্ট অব কেয়ার টেকনোলজি ফর দ্য ডিটেকশন অব ক্যানসার বায়োমার্কস’ নামের এই প্রজেক্টে অন্যতম প্রধান সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। এই ডিভাইসের প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজ কিন্তু কার্যকর।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “টেস্টটিতে রং পরিবর্তন করতে পারে এমন এক ধরনের তরল ব্যবহার করা হয়। দেহের যে কোনো জায়গায় ক্যানসারে আক্রান্ত কোনো কোষ থাকলে এটি শনাক্ত করতে পারবে এবং রং পরিবর্তন করে ১০ মিনিটের মধ্যেই এ ব্যাপারে জানান দেবে।”
বিপ্লবী সুবিধাসমূহ
এই প্রযুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো:
সাশ্রয়ী মূল্য: বর্তমান ক্যানসার শনাক্তকরণ পদ্ধতির তুলনায় এই ডিভাইসের খরচ ৮০ শতাংশ কম। এটি সাধারণ মানুষের নাগালে ক্যানসার পরীক্ষা নিয়ে আসবে।
সহজলভ্যতা: যেহেতু প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সরল, তাই যে কোনো সাধারণ ক্লিনিকেই এই পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা থাকতে পারবে। বড় হাসপাতাল বা বিশেষায়িত কেন্দ্রের প্রয়োজন নেই।
দ্রুততা: মাত্র ১০ মিনিটে ফলাফল পাওয়া যায়, যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে সময় লাগে অনেক বেশি।
ব্যাপক প্রয়োগযোগ্যতা: শরীরের যে কোনো অংশের ক্যানসার এই ডিভাইস শনাক্ত করতে সক্ষম।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং বাণিজ্যিকীকরণ
ছোট পরিসরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফলতা পাওয়ার পর এখন বড় পরিসরে পরীক্ষার জন্য এই ডিভাইস যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকার একটি বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়েছে, যারা এই ডিভাইসের বাণিজ্যিকীকরণ করতে যাচ্ছে।
ড. সিনা জানান, “কয়েক মিলিয়ন ডলারের বিশাল অ্যামাউন্ট তারা বিনিয়োগ করছে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এটি বাজারে নিয়ে আসা হবে। এতে বিশ্বজুড়েই অনেক মানুষ উপকৃত হবেন।”
জীবন বাঁচানোর মহান লক্ষ্য
ক্যানসার চিকিৎসায় প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত ক্যানসার ধরা পড়ে, চিকিৎসার সফলতার হার তত বেশি। ড. সিনার এই আবিষ্কার সেই লক্ষ্যে এক বিশাল পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, “প্রারম্ভিক অবস্থায় ক্যানসার সেল শনাক্ত করা গেলে দ্রুত অনেক মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। ফলে এ ডিভাইসের ব্যবহার দ্রুত এবং সহজলভ্য হওয়ায় বাঁচবে কোটি জীবন।”
বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়
একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর এই অসামান্য অবদান শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানেই নয়, বরং সমগ্র দেশের জন্য গর্বের বিষয়। ড. আবু আলী ইবনে সিনা প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক শিক্ষা, নিষ্ঠা এবং গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের সন্তানরাও বিশ্বমানের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করতে সক্ষম।
তাঁর সাফল্য দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আরও বেশি বাংলাদেশি মেধা যুক্ত হওয়ার পথ প্রশস্ত করবে।
ক্যানসারের মতো একটি ভয়াবহ রোগের বিরুদ্ধে মানবজাতির লড়াইয়ে ড. আবু আলী ইবনে সিনার এই আবিষ্কার এক নতুন অস্ত্র। সাশ্রয়ী মূল্য, সহজলভ্যতা এবং দ্রুত ফলাফলের কারণে এই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী ক্যানসার চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।
আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যখন এই ডিভাইস বাজারে আসবে, তখন লাখো-কোটি মানুষ এর সুফল পাবেন। বাংলাদেশের একজন সন্তানের এই অবদান শুধু বিজ্ঞানের ইতিহাসে নয়, মানবকল্যাণের ইতিহাসেও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।