বুধবার, আগস্ট ২০, ২০২৫
HomeBusinessStartupসফল স্টার্টআপ মানে সব হ্যাঁ নয়—জানুন কখন ‘না’ বলবেন

সফল স্টার্টআপ মানে সব হ্যাঁ নয়—জানুন কখন ‘না’ বলবেন

“ভাই, এই ফিচারটাও দিয়ে দাও না… আমার দরকার।”

“এই মার্কেটটা খুব লাভজনক, ট্রাই করে দেখো।”

“এইটা না রাখলে ইউজার কমে যাবে।”

এমন কথা কি আপনার স্টার্টআপ যাত্রায় কেউ বলেনি?

ঢাকার ফাহিম, একজন তরুণ উদ্যোক্তা। ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করার পর অনলাইন লজিস্টিক সল্যুশন নিয়ে ছোট একটি SaaS প্রোডাক্ট বানান। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই চারদিকে থেকে আসতে থাকে সাজেশন—“ফিচার বাড়াও, এক্সটেনশন দাও, নতুন মার্কেটে ঢোকো…”

ফাহিম ভয় পেয়ে গেলেন। যেন কিছু বাদ পড়ছে, যেন পিছিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি প্রতিদিন একটা করে নতুন ফিচার রোলআউট করতে লাগলেন।

ফলাফল?

মূল প্রোডাক্ট ভুলে গেলেন। ইউজাররা কনফিউজড। টিম ক্লান্ত।

ছয় মাস পরে যখন অ্যাকাউন্ট দেখলেন—তখন বুঝলেন, সবকিছুর মাঝে তিনি হারিয়ে ফেলেছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি: ফোকাস।

এই গল্পটা শুধু ফাহিমের নয়। এটা বাংলাদেশের শত শত স্টার্টআপের অদৃশ্য বাস্তবতা—যেখানে “না” বলার ক্ষমতা না থাকার কারণে শত সম্ভাবনা থেমে যায়।

স্টার্টআপে না বলার শক্তি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

“না” মানে পিছিয়ে পড়া নয়, বরং নিজের গন্তব্য ঠিক রাখা বোঝায়।

স্টিভ জবস বলেছিলেন—“Innovation is saying no to 1,000 things.”

স্টার্টআপ মানেই প্রতিদিন নতুন অফার, নতুন ফিচার, নতুন মার্কেট, নতুন সাজেশন। কিন্তু সব দিকেই যদি ছোট ছোট পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে কোথাও পৌঁছানো যায় না।

ফোকাস না থাকলে কী হয়?

  • প্রোডাক্টের কোয়ালিটি পড়ে যায়
  • কাস্টমার মেসেজিং দুর্বল হয়
  • টিম কনফিউশনে পড়ে
  • রিসোর্স ছড়িয়ে পড়ে, ফল হয় না
  • ইনভেস্টর বা কাস্টমার কেউই আপনাকে সিরিয়াস নেয় না

আপনি যদি প্রতিদিন নতুন কিছু করতে গিয়ে নিজের মূল সমস্যার সমাধানে মনোযোগ না দেন, তাহলে স্টার্টআপ শুধু চলবে—বড় হবে না।

বাংলাদেশি উদাহরণ: Pathao বনাম অন্যরা

Pathao প্রথমে শুধু রাইড শেয়ারিং দিয়েই শুরু করেছিল।

কেউ কেউ বলেছিল, “ফুড, ই-কমার্স, পেমেন্ট, সবকিছু একসাথে দাও।”

কিন্তু Pathao তাদের প্রথম ২ বছরে শুধু রাইড শেয়ারিংয়ে ফোকাস করেছিল। ফলে ইউজার বেস, ব্র্যান্ড ভ্যালু, এবং ইনভেস্টর কনফিডেন্স গড়ে ওঠে।

অন্যদিকে, অনেক ছোট স্টার্টআপ দেখা যায়—তারা একসাথে ৪টা ফিচার, ৩টা মার্কেট, আর ১০ রকম কনটেন্ট নিয়ে শুরু করে। ফলাফল? কনফিউশান, কস্ট বেড়ে যাওয়া, আর কাঙ্ক্ষিত প্রোডাক্ট-মার্কেট ফিট না পাওয়া।

স্টার্টআপের ফোকাস হারানোর সাধারণ ৫টি ফাঁদ

১. ক্লায়েন্ট/ইনভেস্টরের চাপে ফিচার যোগ করা

– একজন বলল, “এইটা দিলে আমি ইনভেস্ট করবো।”

– আরেকজন বলল, “এই ফিচার না থাকলে আমরা ব্যবহার করব না।”

প্রশ্ন করুন: এই ফিচার কি আমার মূল সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে?

২. ট্রেন্ড ফলো করা

AI চলছে? সেটাও অ্যাড করি। WhatsApp বট চালু? আমাদেরকেও লাগবে।

এইভাবে নিজের প্রোডাক্ট এক্সপেরিমেন্ট ল্যাবে পরিণত হয়।

মনে রাখুন: সব ট্রেন্ড আপনার বিজনেসের জন্য না।

৩. Too Many Audiences

ছাত্র, দোকানদার, কর্পোরেট, গার্মেন্টস—সবার জন্য সল্যুশন দিলে কারও সমস্যার গভীরে যাওয়া সম্ভব না।

বরং একটি নির্দিষ্ট ICP (Ideal Customer Profile) বেছে নিন।

৪. টিমের সবার আইডিয়া একসাথে ধরা

দলভুক্ত সবাইকে শোনানো জরুরি, তবে তার মানে এই নয় সবকিছু বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রোডাক্ট লিডার হিসেবে “না” বলার ক্ষমতা রাখুন।

৫. Fear of Missing Out (FOMO)

“ওরা এটা দিচ্ছে, আমরা দিলে না কেন?”

এই তুলনায় পড়ে নিজের ইউনিকনেস হারিয়ে ফেলা খুব সহজ।

মনে রাখুন: অন্যের মতো হতে গেলে নিজের পথ হারাবেন।

কীভাবে ‘না’ বলার প্র্যাকটিস শুরু করবেন?

১. নিজের Core Vision লিখে রাখুন

– আপনি কী সমস্যা সমাধান করছেন

– কে আপনার ইউজার

– কীভাবে সেটা অন্যদের চেয়ে আলাদা

এটা যেন আপনাকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়—“এইটুকুই আমার জোন, বাকি সব নয়।”

 ২. Decision Matrix তৈরি করুন

প্রতিটি নতুন প্রস্তাব বা ফিচার নিয়ে ২টি প্রশ্ন করুন—

  • এটা কি কোর সমস্যার সঙ্গে যুক্ত?
  • এটা কি এখন জরুরি?

না হলে, সেটাকে বলুন: “Not now.”

৩. Weekly Focus Review করুন

– আপনি কোথায় সময় দিচ্ছেন

– কোন কাজ ফল আনছে, কোনটা শুধু ব্যস্ত রাখছে

– কী বাদ দিলে মূল ফিচার/সার্ভিস আরও ভালো হয়

 ৪. ট্রাকশন না আসা পর্যন্ত পিভট না করুন

– প্রথম ১০ জন ইউজারের ফিডব্যাক না পাওয়া পর্যন্ত আপনার আইডিয়া চেঞ্জ করবেন না।

– একবার ঠিক করে নিন, তারপর ধৈর্য ধরুন।

না বলাটা আপনার স্টার্টআপের সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত হতে পারে

উদ্যোক্তারা অনেক সময় মনে করেন, “সব করতে পারলেই সফল হব।”

আসলে, যারা সঠিক সময়ে “না” বলতে পারে, তারাই সত্যিকারের ফোকাস ধরে রাখতে পারে।

স্টার্টআপের শুরুতে হয়তো আপনি ছোট একটা টিম, ছোট বাজেট, ছোট মার্কেট নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু যদি আপনি জানেন কোনটা আপনার কাজ না, তাহলেই আপনি হয়ে উঠবেন একজন দৃঢ়, দিকনির্দেশনামূলক নেতা।

ভবিষ্যতে বড় হওয়ার জন্য এখনই ছোট ছোট “না” বলুন—সেই “না”-গুলোই একদিন আপনাকে সবার চেয়ে আলাদা করে তুলবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular