রাতে ঘুমানোর আগে আমরা অনেকেই মোবাইল রেখে পাশ ফিরি—কেউ ডান দিকে, কেউ বাম দিকে। কিন্তু আপনি কি জানেন, কোন পাশে ঘুমানো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, সেটা ঠিক করে দিতে পারে আপনার হজম, হার্ট বা এমনকি ব্রেইন ফাংশন?
আজকে আমরা জানবো—বিজ্ঞান কী বলছে ডান ও বাম পাশে ঘুমানোর উপকারিতা ও বিপদ সম্পর্কে।
ঘুমের ভঙ্গি আমাদের শরীরকে কতটা প্রভাবিত করে?
ঘুম শুধুই বিশ্রামের সময় না, এই সময়েই আমাদের শরীর সারাদিনের টক্সিন, হরমোন, মেটাবলিজম এবং হজম প্রক্রিয়া রিসেট করে। আর এই সময় আপনি কিভাবে শুয়ে থাকছেন, তার উপর ভিত্তি করেই অনেক স্বাস্থ্যগত প্রভাব পড়ে।
বাম পাশে ঘুমানোর ৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
হজমে সহায়ক:
বাম পাশে ঘুমালে আমাদের পাকস্থলীর গঠন অনুযায়ী খাবার সহজে নিচে নামতে পারে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম হয়।
হার্টের জন্য ভালো:
আমাদের হৃদপিণ্ড শরীরের বাম পাশে থাকে। বাম পাশে শোয়ার ফলে রক্ত সঞ্চালন সহজ হয় এবং হার্টের ওপরে চাপ কম পড়ে।
লিম্ফ্যাটিক ড্রেনেজ:
গবেষণা অনুযায়ী, বাম পাশ শরীরের লিম্ফ সিস্টেম (বিষাক্ত পদার্থ বের করে) বেশি ভালো কাজ করে, যার ফলে ডিটক্সিফিকেশন কার্যকর হয়।
প্রেগনেন্সির সময় উপযোগী:
গর্ভবতী নারীদের জন্য বাম পাশে শোয়া সবচেয়ে ভালো ধরা হয়। এতে গর্ভফুলে রক্ত চলাচল সহজ হয় এবং শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত হয়।
ঘুমের মান উন্নত হয়:
অনেকেই বলেন, বাম পাশে ঘুমালে গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হয়। এটি মানসিক প্রশান্তি ও রিচার্জের জন্য উপকারী।
ডান পাশে ঘুমানোর সম্ভাব্য সমস্যা
অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি:
ডান পাশে ঘুমালে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসার সম্ভাবনা থাকে, যা পেটের জ্বালা বা গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
হার্টে বাড়তি চাপ:
বিশেষ করে যাদের হাই ব্লাড প্রেসার বা হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ডান পাশে শোয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া ও নাক ডাকা বাড়তে পারে:
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডান পাশে শোয়ার ফলে এয়ারওয়ে কম মুক্ত থাকে, ফলে ঘুমের ব্যাঘাত হয়।
তবে কি সবসময় বাম পাশেই ঘুমানো উচিত?
সবাইয়ের ক্ষেত্রে এক উত্তর খাটে না। কিছু মানুষ হয়তো বাম পাশে শুলে বুক ধড়ফড়, অ্যাসিডিটি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন। এক্ষেত্রে শরীরের নিজস্ব প্রতিক্রিয়া বোঝা জরুরি।
একটি ব্যালেন্সড পরামর্শ:
✅ সাইড ঘুমানো ভালো—কারণ এতে স্পাইন সোজা থাকে
✅ বাম পাশে ঘুমানো বেশিরভাগের জন্য উপকারী
✅ রাতে ঘুম শুরু বাম পাশে করে মাঝখানে অটো বদল হওয়া স্বাভাবিক
✅ বালিশ ও ম্যাট্রেস যেন ঘাড় ও কোমরের সমান্তরাল থাকে
ঘুমের ভঙ্গি ঠিক রাখার কিছু প্র্যাকটিক্যাল টিপস:
- বাঁ কানে না শুয়ে পিলো সমান রেখে ঘুমান
- পেটের ওপর চাপ না দিয়ে হালকা হাত পাশে রাখুন
- হাঁটুর মাঝে ছোট বালিশ রাখতে পারেন—এতে কোমরের ভারসাম্য বজায় থাকে
- খুব শক্ত বা খুব নরম ম্যাট্রেস ব্যবহার না করাই ভালো
“কোন পাশে ঘুমাবো?”—এটা শুধু আরামের বিষয় নয়, বরং স্বাস্থ্যের প্রশ্ন। আপনি যদি প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমান, তাহলে শরীরকে সঠিক ভঙ্গিতে বিশ্রাম দেওয়াও আপনার দায়িত্ব। সুতরাং, আজ রাতেই চেষ্টা করুন—বাম পাশে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে। একটা ছোট পরিবর্তন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সুফল!