back to top
শুক্রবার, জুলাই ২৫, ২০২৫
HomeProductivityPersonal Developmentসংসারের দায়িত্বে চাপা পড়া স্বপ্ন—নিজেকে মোটিভেট রাখার বাস্তব উপায়

সংসারের দায়িত্বে চাপা পড়া স্বপ্ন—নিজেকে মোটিভেট রাখার বাস্তব উপায়

“তোর চাকরি দরকার, শখ নয়!”

“আমাদের অবস্থা জানিস—এখন এসব করার সময় না।”

এই কথাগুলো শুনে বড় হওয়া মানুষদের একটা কমন নাম আছে—“সংসারের হিরো”।

তারা পড়াশোনা শেষ করে নিজের স্বপ্ন নিয়ে একটু একটু করে হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু মাঝপথেই কেউ না কেউ বলে বসে, “তোর স্বপ্ন দিয়ে ভাত হবে?”

আর তখনই তারা নিজেদের ইচ্ছেকে তুলে রাখে ড্রয়ারে, দায়িত্বের ফাইলের পাশে।

আজকের এই লেখাটা তাদের জন্য—যারা পরিবারকে আগলে রাখতে গিয়ে নিজের স্বপ্নকে ভুলতে বসেছে।

দ্বৈত পরিচয়: বাইরে হাসি, ভেতরে হাল ছেড়ে দেওয়া মানুষ

আমরা অনেকেই দেখি:

  • একজন ছেলে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা অফিস করেন, অথচ রাতে নিজের আঁকা পোস্টারগুলো লুকিয়ে রাখেন।
  • এক তরুণী, যিনি চাকরির পাশাপাশি ইউটিউব ভিডিও বানাতে চান, কিন্তু মা বলেন—“বিয়ে কর, এসব পরে করবি।”

এই বাস্তবতায় সেলফ মোটিভেশন মানে শুধু মোটিভেশন না—একটা যুদ্ধ, যেখানে নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখাই বড় বিজয়।

সংসারের দায়িত্ব মানে কি নিজের স্বপ্ন বিসর্জন?

না।

দায়িত্ব নেওয়া সম্মানের, কিন্তু সেটার চাপে যদি নিজের আগ্রহগুলো মরে যায়, তাহলে আপনি একসময় নিজেই ভিতর থেকে ফাঁপা হয়ে যাবেন।

আপনি যদি সকালে অফিস করে রাতে প্যাশনের দিকে ১ ঘণ্টা সময়ও দিতে পারেন, সেটাই একদিন আপনাকে মুক্তি দেবে।

সময় নেই—এই অভিযোগটাই কীভাবে সম্ভাবনায় বদলে যায়

চট্টগ্রামের হাসান ৯টা-৯টা শিফটে চাকরি করতেন। তিনি আর্কিটেকচারে আগ্রহী ছিলেন। দিনে কাজ, রাতে ইউটিউবে শেখা।

সেই শেখা থেকেই তিনি নিজের ডিজাইন পোর্টফোলিও বানান। ২ বছর পর ফ্রিল্যান্সে এক ক্লায়েন্ট পান। এখন তার নিজের ডিজাইন স্টুডিও।

তিনি বলেন—

“আমি অফিসের পর ক্লান্ত থাকতাম। কিন্তু জানতাম, আমার ভিতরের আগ্রহটা বাঁচাতে হবে। নাহলে একদিন আমি নিজেই নিজেকে ভুলে যাব।”

আপনিও পারেন, যদি নিজের ভিতরের আগ্রহটাকে একটু একটু করে সময় দেন।

নিজের কথা বলার সাহসও একটা মোটিভেশন

অনেক সময় আমরা চুপ করে যাই। পরিবার বুঝবে না ভেবে নিজের স্বপ্নের কথা বলি না।

কিন্তু আপনি যদি বোঝাতে পারেন—আপনি দায়িত্ব নিচ্ছেন, তবে নিজের স্বপ্নটাকেও সময় দিচ্ছেন—তাহলে হয়তো পরিবারও একদিন বুঝবে।

একটি দিন ঠিক করুন, পরিবারকে বোঝান:

“আমি আপনাদের পাশে থাকব, কিন্তু নিজের জন্যও একটু পাশে থাকতে চাই।”

ব্যর্থতা আসবেই—কারণ আপনি সাধারণ নন

হ্যাঁ, আপনি একসঙ্গে কাজ, সংসার, পড়াশোনা সব সামলাচ্ছেন—সুতরাং ক্লান্ত হবেনই।

কিন্তু আপনি তো সুপারহিউম্যান হবার চেষ্টাও করছেন না।

আপনি চাইছেন নিজের স্বপ্নকে ধীরে ধীরে বাস্তবে নিয়ে আসতে।

সুতরাং ব্যর্থতা মানেই “আমি পারছি না” না—এর মানে আপনি নিজের ভবিষ্যতের পথে আছেন।

বাস্তবিকভাবে সেলফ মোটিভেটেড থাকার ৫টি দিক

১. আপনার ছোট অর্জনগুলো লিখে রাখুন

আজ যদি আপনি ১০ মিনিট নতুন কিছু শিখতে পারেন—লিখে ফেলুন।

২. প্রতি সপ্তাহে ১ দিন নিজের সময় রাখুন

রান্না, কাজ, পরিবারের পর ১ ঘণ্টা নিজের স্বপ্নের কাজে দিন।

৩. প্যাশনের পাশে ইনকাম অপশন খুঁজুন

যেমন ইউটিউব মানে শুধু শখ নয়, আয়ও হতে পারে। Canva দিয়ে ডিজাইন মানে কাজের অপশনও।

৪. নিজের মতের মানুষ খুঁজুন

অনলাইনে বা আশপাশে এমন মানুষ খুঁজুন যারা বুঝবে আপনি কী করতে চাইছেন।

৫. নিজের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করবেন না

প্রতিদিন আয়নায় তাকিয়ে বলুন—“তুই যথেষ্ট।”

আপনি যদি নিজের স্বপ্নকে একটু সময় দেন, সেটাই একদিন আপনাকে পুরো পরিবারসহ আগলে নেবে

আমরা অনেকেই হয়তো সেরা হতে পারি না, কিন্তু নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণটা অন্তত নিজের হাতে রাখতে পারি।

আজ আপনি যদি নিজের প্যাশনের জন্য ৩০ মিনিট সময় দিতে পারেন, কাল আপনি সেটা দিয়েই পরিবারকে আরও ভালোভাবে আগলে রাখতে পারবেন।

আপনার স্বপ্ন শুধু আপনার না—এটা একদিন হবে পরিবারেরও গর্ব।

“নিজের স্বপ্ন ফেলে রাখা মানে নিজেকে ভুলে যাওয়া”

যারা আজ সংসার, চাকরি, বাস্তবতা সামলে নিজের স্বপ্নকে কিছুটা সময় দিচ্ছেন—তাদের সেলফ মোটিভেশন মানে গল্প নয়, বেঁচে থাকার কৌশল।

আপনি একদিন ঠিকই প্রমাণ করবেন—“আমি শুধু কারো দায়িত্ব না, আমি নিজেরও স্বপ্ন।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular