সোমবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫
HomeWellbeingMental Healthওভারথিঙ্কিং: অন্যরা যা ভাবে বনাম আসলে কেমন লাগে

ওভারথিঙ্কিং: অন্যরা যা ভাবে বনাম আসলে কেমন লাগে

আপনি কি কখনও ভেবেছেন, কেন ছোট্ট একটা ঘটনা বা কারও কথার ওপর ঘন্টার পর ঘন্টা, এমনকি দিনের পর দিন মাথা ঘামান? অন্যরা হয়তো ভাবে—“তুমি খুব সেনসিটিভ”, “ছোট জিনিস বড় করে দেখো”, বা “অযথা বেশি ভাবো”। কিন্তু আসল সত্যি অনেক গভীর।

যেখানে প্রতিদিনের জীবনেই থাকে অসংখ্য অনিশ্চয়তা—চাকরির চাপ, পারিবারিক দায়িত্ব, সামাজিক প্রত্যাশা—সেখানে ওভারথিঙ্কিং (Overthinking) অনেকের নীরব সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এটা শুধুই “বেশি ভাবা” নয়—এটা আসলে আপনার মনের এক গভীর প্রতিক্রিয়া, যা প্রায়শই আসে অতিরিক্ত যত্ন, দায়িত্ববোধ আর নিজের ভেতরের ভয় থেকে।

১. “তুমি তো সারাক্ষণ Sorry বলো!”

অন্যরা ভাবে, আপনি ভদ্রতা দেখানোর জন্যই সবসময় “সরি” বলেন। কিন্তু আসল কথা হলো, আপনি মনে মনে এক অদৃশ্য অপরাধবোধ বহন করছেন—যেন আপনি অনিচ্ছাকৃতভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন কিনা! বিশেষ করে মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় “ভদ্র হও”, “অন্যকে কষ্ট দিও না”। ফলাফল? অনেক সময় সামান্য ঘটনাতেও মনে হয়—“আমি কি ভুল কিছু করলাম?”

২. “ছোট জিনিস নিয়ে আটকে আছো”

আপনার বন্ধুরা বা পরিবার হয়তো ভাবে, আপনি একেবারে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পড়েছেন। কিন্তু আসলে আপনি প্রতিটা ডিটেইল বুঝে নিতে চান—কারণ আপনার মন আপনাকে ছাড়ে না যতক্ষণ না পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি অফিসে বসের মুখে একটু রুক্ষতা পান, সারাদিন ভাবতে থাকবেন—“কোথায় ভুল করলাম?”

৩. “অতীত নিয়ে পড়ে আছো”

অন্যরা ভাবে, আপনি অতীতের কথা ভুলতে পারেন না। আসলে, আপনি এখনও সেই ক্ষত সারাতে চেষ্টা করছেন, যা হয়তো কোনোদিন পূর্ণ closure পায়নি। সম্পর্কের ক্ষেত্রে, অনেক সময় কথাগুলো মুখে বলা হয় না—বিচ্ছেদ, ভুল বোঝাবুঝি, কিংবা বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়া—সবই থেকে যায় মনের কোণে, আর ওভারথিঙ্কিং তখন সেই ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে থাকে।

৪. “তুমি চুপচাপ, কিছু বলার নেই”

তারা ভাবে, আপনার কাছে বলার মতো কিছু নেই। আসলে, আপনি মাথার ভেতরে ইতিমধ্যেই ১০টা কনভারসেশন চালিয়ে ফেলেছেন—কিন্তু ভয় করছেন ভুল কিছু বলে ফেলবেন কিনা! বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে, যেখানে “কে কী ভাববে” তা খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে ভুল বলার ভয় ওভারথিঙ্কিংকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

৫. “তুমি আবারও ওভাররিঅ্যাক্ট করছো”

অন্যরা ভাবে, আপনি বাড়াবাড়ি করছেন। কিন্তু আসলে আপনার মস্তিষ্ক সম্ভাব্য সব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছে—কারণ আপনি জানেন, প্রস্তুত থাকা অপ্রস্তুত থাকার চেয়ে অনেক নিরাপদ। যেমন ধরুন, আপনি কারও বাসায় যাচ্ছেন—মনে মনে রিহার্সাল করছেন কাকে কী বলবেন, কীভাবে বসবেন, এমনকি যদি কেউ খারাপ প্রশ্ন করে তখন কী উত্তর দেবেন।

কেন আমরা ওভারথিঙ্ক করি?

মনোবিজ্ঞানের গবেষণা বলছে, ওভারথিঙ্কিং অনেক সময় আসে Anxiety, Low Self-Esteem, বা Past Trauma থেকে। আমাদের মস্তিষ্ক চায় ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে—যেন কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এসে ধাক্কা না দেয়। সামাজিক চাপ, পারিবারিক প্রত্যাশা, এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ অনেকের মস্তিষ্ককে “Always on Alert” অবস্থায় রাখে।

ওভারথিঙ্কিংয়ের প্রভাব

যদিও যত্নশীলতা একটি সুন্দর গুণ, কিন্তু যখন তা শান্তি কেড়ে নেয়, তখন সেটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

  • শরীরের ওপর প্রভাব: অনিদ্রা, মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা
  • মনের ওপর প্রভাব: আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, অস্থিরতা, একাকীত্ব
  • সম্পর্কের ওপর প্রভাব: অপ্রয়োজনীয় ভুল বোঝাবুঝি, মানসিক দূরত্ব

কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়?

  • লিখে ফেলুন: যা ভাবছেন, কাগজে লিখুন—মস্তিষ্কের চাপ কমে যাবে।
  • টাইম লিমিট দিন: কোনো বিষয় নিয়ে ১০-১৫ মিনিট ভাবুন, তারপর নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত করুন।
  • গ্রাউন্ডিং টেকনিক: আশপাশের ৫টা জিনিস দেখুন, ৪টা স্পর্শ করুন, ৩টা শুনুন—এতে মন বর্তমান মুহূর্তে ফিরে আসবে।
  • বিশ্বাসযোগ্য কারও সঙ্গে কথা বলুন: শুধু শোনানোর জন্য হলেও, মনের ভেতরের বোঝা হালকা হয়।
  • মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাস: দিনে কয়েক মিনিট গভীর শ্বাস নিলে মন শান্ত হয়।

ওভারথিঙ্কিং মানে এই নয় যে আপনার মধ্যে সমস্যা আছে। এর মানে আপনি যত্নশীল, দায়িত্ববান, এবং সংবেদনশীল। কিন্তু সেই যত্ন যদি আপনার নিজের শান্তি কেড়ে নেয়, তবে সেটি ভারসাম্যে আনা জরুরি। নিজেকে মনে করিয়ে দিন—আপনি মানুষ, আপনার ভুল হতেই পারে, আর সবকিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular