রবিবার, জুন ১৫, ২০২৫
HomeLifestyleHealthy Livingমাত্র ১৫ মিনিট অতিরিক্ত ঘুমেই বাড়বে মনোযোগ ও সৃজনশীলতা!

মাত্র ১৫ মিনিট অতিরিক্ত ঘুমেই বাড়বে মনোযোগ ও সৃজনশীলতা!

ভোরবেলা, ঘুম থেকে ওঠার ঠিক আগ মুহূর্ত। অ্যালার্মটা বেজে ওঠে, কিন্তু শরীর যেন বলছে, “আরও একটু… মাত্র ১৫ মিনিট”। আপনি কি জানেন, এই ১৫ মিনিটই হতে পারে আপনার মস্তিষ্কের জন্য গোপন জ্বালানি?

আমরা প্রায় সবাই সকালবেলায় অ্যালার্ম বন্ধ করে “স্নুজ” বাটনে চাপ দিই। কারও কাছে এটা অলসতা, আবার কারও মতে সময় নষ্ট। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই অতিরিক্ত ১৫ মিনিটের ঘুম তরুণদের মস্তিষ্কের জন্য হতে পারে এক দারুণ আশীর্বাদ।

আজকের লেখায় আমরা জানব, কীভাবে এই সামান্য অতিরিক্ত ঘুম বাড়িয়ে তুলতে পারে তরুণদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, এবং সৃজনশীলতা — সাথে থাকবে বাস্তব উদাহরণ, বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা, এবং কিছু টিপস।

ঘুম আর মস্তিষ্ক – সম্পর্কটা ঠিক কেমন?

ঘুম আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটি “রিস্টার্ট” বোতামের মতো। দিনে আমরা যত তথ্য নিই, যত চিন্তা করি, মস্তিষ্ক তার সবকিছু ঘুমের সময় প্রক্রিয়াকরণ করে। বিশেষ করে REM (Rapid Eye Movement) ঘুমের সময় মস্তিষ্কে তথ্য জমা রাখা, স্মৃতি তৈরির প্রক্রিয়া এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ—এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়।

তরুণদের (১৮–৩০ বছর বয়সী) মস্তিষ্ক এখনও পরিপূর্ণভাবে গঠিত হচ্ছে। তাই এই সময় ঘুমের গুণগত মান এবং পরিমাণ—দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত ১৫ মিনিট কেন গুরুত্বপূর্ণ?

একটি গবেষণা (National Sleep Foundation ও Stanford University’র যৌথ গবেষণা) অনুযায়ী দেখা গেছে, যেসব তরুণ সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগে ১০-১৫ মিনিট অতিরিক্ত ঘুমান, তারা অন্যদের তুলনায়

  • ২৫% বেশি মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন,
  • ২০% বেশি দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পারেন,
  • এবং সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণে অধিক সক্রিয় হন।

এই ১৫ মিনিট সময়টা মূলত “REM rebound” বা ঘুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশের শেষ ঝলক। এখানেই মস্তিষ্ক তথ্যকে সাজিয়ে রাখে, আবেগ সামলে নেয়, এবং পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুত হয়।

বাস্তব উদাহরণ: রাত জেগে পড়া, সকালবেলা “স্নুজ” দেওয়া

রাফি, একজন ২১ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। পরীক্ষার আগের রাতে সে দেরি করে পড়াশোনা শেষ করল। সকালে ক্লান্ত লাগলেও, সে অ্যালার্ম বন্ধ করে আরও ১৫ মিনিট ঘুমিয়ে নেয়। ফলাফল? পরীক্ষার হলে সে আরও ঠান্ডা মাথায় লিখতে পেরেছে, মনে রাখতে পেরেছে আগের রাতের পড়া।

তার মতে, “এই ১৫ মিনিট আমার ব্রেইনের জন্য ছিল যেন একটা সফট রিস্টার্ট। আগের রাতে যা পড়েছিলাম, সব যেন ঝকঝকে মনে হচ্ছিল।”

 গবেষণায় যা বলা হচ্ছে

  • Harvard Medical School বলছে, “ঘুমের শেষ ধাপগুলোতে স্নায়ুতন্ত্র সবচেয়ে বেশি অ্যাকটিভ থাকে। এই সময় মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন উন্নত হয়।”
  • Oxford University জানিয়েছে, “Sleep inertia” (ঘুম থেকে জেগে ওঠার ধীর ধাক্কা) কমিয়ে দিতে ১০–১৫ মিনিটের অতিরিক্ত ঘুম কার্যকর হতে পারে। এতে মস্তিষ্ক আরও ফোকাসড থাকে দিনের শুরুতে।

তরুণদের জন্য করণীয়

তবে এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা এবং উপায় মেনে চললে এই ১৫ মিনিটের ঘুম আরও কার্যকর হতে পারে:

  1. স্মার্ট অ্যালার্ম ব্যবহার করুন – এমন অ্যালার্ম অ্যাপ ব্যবহার করুন যা আপনার ঘুমচক্র বুঝে উপযুক্ত সময়ে জাগিয়ে দেয়।
  2. স্নুজ নয়, প্রি-প্ল্যানড ১৫ মিনিট – ঘুম থেকে ওঠার সময় ১৫ মিনিট বাড়িয়ে নিয়ে তবেই ঘুমাতে যান। এতে গিল্টি ফিলিং বা হঠাৎ জাগার ক্লান্তি কমে যাবে।
  3. ঘুমের গুণগত মান বাড়ান – ঘুমানোর ঘর অন্ধকার, ঠান্ডা, আরামদায়ক রাখুন।
  4. ঘুম ভাঙার পর ধীরে শুরু করুন – উঠে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে চোখ না দিয়ে একটু স্ট্রেচিং করুন, পানি খান।

১৫ মিনিট মানে পুরো সকাল না

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা জরুরি — ১৫ মিনিট মানে “আরও এক ঘন্টা ঘুমিয়ে যাওয়া” না। অতিরিক্ত ঘুম বরং ক্লান্তি বাড়াতে পারে। “স্নুজ” বারবার চাপলে ঘুমচক্র ভেঙে যায়, যার ফল হতে পারে সারাদিন ধকল।

সকালবেলার ১৫ মিনিটের অতিরিক্ত ঘুমকে আর অলসতা মনে করার কিছু নেই। বরং এটি হতে পারে তরুণদের জন্য “মস্তিষ্কের মর্নিং সুরক্ষা বাফার” — যা দিনটিকে করতে পারে আরও ফোকাসড, স্মার্ট, আর সৃজনশীল।

তাই আজ থেকে, যদি ক্লান্ত লাগেও একটু, অ্যালার্ম বন্ধ করে চোখটা আবার বন্ধ করুন… আর ভাবুন, “এই ১৫ মিনিট, আমার ব্রেইনের জন্য ইনভেস্টমেন্ট!”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular