ভাবুন তো, আপনি এমন একটি বাড়িতে থাকছেন যেটি হোয়াইট হাউস থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরত্বে! বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ ঠিক তাই-ই করছেন। সম্প্রতি তিনি ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা (২৩ মিলিয়ন ডলার)-র এক বিলাসবহুল প্রাসাদ কিনেছেন। তবে এটা শুধু রিয়েল এস্টেট কেনাকাটা নয়, বরং মার্ক জাকারবার্গের জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচনা।
▪️ বিলাসিতা নাকি প্রভাবের মঞ্চ?
যে বাড়ির কথা বলা হচ্ছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি—উডল্যান্ড নরম্যানস্টোন। বিশাল ১৫,০০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে নির্মিত এই আধুনিক রেড-ব্রিক ফার্মহাউজটি কেবল বিলাসবহুল নয়, এর স্থাপত্যও অনন্য—নকশা করেছেন খ্যাতিমান স্থপতি রবার্ট এম গার্নে। সুইমিং পুল, ব্যক্তিগত বাস্কেটবল কোর্ট, উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সবই রয়েছে এই বাড়িতে।
তবে এই প্রাসাদটির আসল আকর্ষণ এর অবস্থান। হোয়াইট হাউস থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরত্বে, অর্থাৎ মার্কিন প্রযুক্তি নীতিমালায় সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য এক আদর্শ লোকেশন। মেটার একজন মুখপাত্রের ভাষায়, “মার্ক ও প্রিসিলা ডি.সি.-তে একটি বাড়ি কিনেছেন যাতে মার্ক নীতিনির্ধারক এবং টেক নেতৃত্বের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারেন।”
▪️ বিলিয়নিয়ারের আশপাশে আরও বিলিয়নিয়ার
জাকারবার্গ একা নন এই অভিজাত এলাকায়। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং পেপাল সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েল আগেই এখানে জায়গা করে নিয়েছেন। প্রযুক্তি দুনিয়ার এই ধনী মানুষগুলো শুধু বিলাসবহুল জীবনযাপনই করছেন না, বরং তারা যেন আমেরিকার প্রযুক্তি ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সমান্তরাল চালক।
▪️ একজন উদ্যোক্তার জীবনদর্শন
জাকারবার্গের এই প্রাসাদ কেনা অনেকের কাছে বিলাসিতা মনে হতে পারে। কিন্তু এর পেছনে এক গভীর কৌশল রয়েছে। প্রযুক্তি ও নীতিনির্ধারণের সংযোগস্থলে নিজেকে উপস্থিত রাখার পরিকল্পনা এর মধ্যে অন্যতম। একে এক ধরনের ‘ভৌগোলিক স্ট্র্যাটেজি’ বলা যায়। সফল উদ্যোক্তারা জানেন, প্রভাব তৈরি করতে হলে শুধু প্রোডাক্ট বা সেবা নয়—সঠিক সময়, স্থান ও উপস্থিতি-ও গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কের ক্ষেত্রে এটি আরও অর্থবহ, কারণ মেটা বর্তমানে এআই, মেটাভার্স এবং প্রাইভেসি ইস্যুতে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যেখানে সরকারি কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ একটি প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিষয়।
▪️ একটি অনুপ্রেরণামূলক রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য
জাকারবার্গের এই কেনাকাটা তাঁর রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওতে নতুন সংযোজন। ইতিমধ্যে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার পালো অল্টো, লেক তাহো, এবং হাওয়াইয়ের কাউই দ্বীপে বিলাসবহুল সম্পত্তির মালিক। তবে প্রত্যেকটি সম্পত্তির মধ্যেই তিনি তৈরি করেছেন এক ধরনের ব্যক্তিগত ‘মাইন্ডস্পেস’। প্রযুক্তি এবং নেতৃত্বের চাপের মাঝে, এইসব প্রাসাদ যেন তার নিজস্ব শিকড় খুঁজে পাওয়ার জায়গা।
▪️ শুধুই টাকা নয়, সময়ের বার্তা
একজন তরুণ উদ্যোক্তা যখন এতো অর্থ ব্যয় করে একটি বাড়ি কেনেন, তখন অনেকেই হয়তো ভাবেন—এটা শুধুই বিলাসিতা। কিন্তু, জাকারবার্গের এই পদক্ষেপ এক গভীর বার্তা বহন করে: “যেখানে আপনি থাকেন, সেটিও আপনার মিশনের অংশ হতে পারে।”
তাঁর এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। আমাদের মধ্যেও অনেকেই আছে, যারা ছোট শহর থেকে উঠে এসে আজ আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করছেন। তাই একজনের সফলতার এই ‘বাসস্থান’-ও হয়ে উঠতে পারে শেখার বিষয়।
আমরা যখন ব্যক্তিগত উন্নয়ন বা উদ্যোক্তা মানসিকতার কথা বলি, তখন কেবল ব্যবসা নয়—জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তও সেই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। মার্ক জাকারবার্গের এই বাড়ি কেনার গল্প আমাদের শেখায়, সফলতা কেবল অর্থে নয়, কৌশল, দূরদৃষ্টি ও প্রভাবের সংমিশ্রণে গঠিত হয়।
তাই, আপনি যদি কোনো নতুন স্বপ্নের পথে হাঁটছেন, মনে রাখবেন—প্রতিটি সিদ্ধান্ত আপনার ভবিষ্যতের ক্যানভাসে একটি রঙের মতো। বেছে নিন সেই রং, যা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।