“ভেতরে কেমন জানি অস্থির লাগে… যেন কিছুই ভালো লাগে না। নিজের ওপরই রাগ হয় মাঝে মাঝে।”
আপনিও কি কখনো এমন অনুভব করেছেন? তাহলে আপনি একা নন। প্রতিদিন আমাদের মস্তিষ্কে এত কিছু ঘটে, অথচ আমরা একটিবারও ভাবি না—আমাদের নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্র কেমন আছে?
স্নায়ুতন্ত্র আমাদের শরীর আর মনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেই “সাইলেন্ট ওয়ারিয়ার”, যার দায়িত্ব—ভয় পেলে পালানোর সিগন্যাল দেওয়া, রেগে গেলে থামতে শেখানো, মন খারাপ হলে শান্ত হতে সাহায্য করা।
কিন্তু আমরা কি তার যত্ন নিই?
প্রতিদিনের দৌড়ঝাঁপ, দুশ্চিন্তা, অনিরাপত্তা, সোশ্যাল মিডিয়ার শব্দ—সব মিলিয়ে নার্ভাস সিস্টেম হয়ে পড়ে ‘ওভারলোডেড’। তখনই আসে অস্থিরতা, প্যানিক, ঘুমহীনতা, আর এক ধরণের ‘আলাদা হয়ে পড়া’ অনুভূতি।
এখন প্রশ্ন—এই সিস্টেমকে কীভাবে শান্ত রাখা যায়?
চলুন জেনে নেই এমন ৫টি সহজ, বাস্তব আর দয়ালু অভ্যাস—যা আপনার ভিতরের মানুষটিকে একটু একটু করে হালকা করে তুলবে।
১. “ডিজিটাল চা-বিরতি”—ব্রেনকে দিন একটু নিঃশ্বাসের সময়
সকালে ঘুম ভাঙার আগে থেকেই ইনস্টাগ্রামের নোটিফিকেশন, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়েও ইউটিউবের রিলস…
আমাদের ব্রেন যেন ২৪ ঘণ্টা মেশিনের মতো চলছে।
কিন্তু মেশিনও তো মাঝে মাঝে অফ হয়। আমরা কেন না?
করনীয়:
- প্রতিদিন ১ ঘণ্টার ‘নির্জনতা’ দিন নিজেকে।
- ঘুম ভাঙার পর প্রথম ৩০ মিনিট স্ক্রিনমুক্ত রাখুন।
- রাতে ঘুমের আগেও ফোন বন্ধ করে দিন।
এই অভ্যাসটা ছোট হলেও, আপনার ব্রেনকে দিবে বিশ্রামের মতো রিচার্জ।
২. “প্রকৃতি-মনে শান্তি”—সবুজের ছায়ায় স্নায়ুর হেলদোল
আপনি হয়তো জ্যামের শহরে থাকেন। কিন্তু জানেন কি, গাছের পাশে দাঁড়িয়েই মস্তিষ্ক ‘হ্যাপি হরমোন’ ছাড়ে?
গবেষণায় প্রমাণ—২০ মিনিট প্রকৃতির মাঝে থাকলে স্ট্রেস হরমোন Cortisol কমে যায়।
করনীয়:
- সকালে পার্কে হাঁটুন।
- বাসায় ছোট গাছ রাখুন।
- ছুটিতে প্রকৃতির পাশে দিন কাটান।
গাছকে আলাদা কিছু ভাববেন না—ওরাই আমাদের না বলা কথা বোঝে।
৩. “দমে আছে দয়া”—শ্বাসের মধ্যে শান্তির গোপন রাস্তা
আপনি কি জানেন, মনে শান্তি আনতে ওষুধের চেয়েও বেশি কাজ করে এক গভীর শ্বাস?
কারণ, শ্বাস-প্রশ্বাসই নার্ভাস সিস্টেমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
চর্চা করুন:
4-7-8 Breathing —
- ৪ সেকেন্ড শ্বাস নিন
- ৭ সেকেন্ড ধরে রাখুন
- ৮ সেকেন্ডে ছেড়ে দিন
শুধু এই অভ্যাসটাই আপনাকে ভিতর থেকে হালকা করে তুলবে।
৪. “নিজের সঙ্গেই বন্ধুত্ব”—দয়া দিয়ে শুরু হোক দিন
“তুই তো পারবি না”—এই কথাটা যদি কেউ না বলে, আমরা নিজেরাই বলি!
নিজের সঙ্গে কথোপকথনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন যদি নিজেকে ছোট করে দেখেন, তাহলে নার্ভাস সিস্টেম আপনাকে রক্ষা করবে কীভাবে?
করনীয়:
- আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে বলুন: “তুই যথেষ্ট।”
- লিখে ফেলুন—আজ আমি কী শেখলাম, কাকে ভালোবাসলাম, কী ভালো করলাম।
ভালোবাসার কথাগুলো সবার আগে নিজের কানে যাক।
৫. “ঘুম নয় বিলাসিতা”—ঘুমই আপনার স্নায়ুর সেরা বন্ধু
ঘুমের সময়ই আমাদের নার্ভাস সিস্টেম সারাদিনের ধকল মুছে ফেলে।
ঘুম ঠিক না হলে, মন খারাপ, মনযোগ হারানো, সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা—সবকিছুই বেড়ে যায়।
করনীয়:
- ঘুমানোর আগে ১ ঘণ্টা স্ক্রিন বন্ধ
- হালকা মিউজিক, বই, বা মেডিটেশন
- ঘরের আলো কমিয়ে দিন
- নির্দিষ্ট সময়ে শোয়ার অভ্যাস করুন
ঘুম মানেই শক্তি সঞ্চয়—not luxury, it’s survival.
চাপ নয়, একটু দয়া চাই
আজকের দুনিয়ায় আপনি যতই জানুন, যতই পারফর্ম করুন, যতই ব্যস্ত থাকুন—আপনার ভিতরের ছোট্ট স্নায়ু যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আপনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না।
এই ৫টি অভ্যাস মানে শুধু নিয়ম না, এগুলো একেকটা ভালোবাসার অভ্যাস। নিজের প্রতি, নিজের স্নায়ুর প্রতি, নিজের জীবনের প্রতি।
কারণ, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ—নিজের কাছে।
আজ থেকেই শুরু করুন—একটু নিঃশ্বাস, একটু প্রকৃতি, একটু ভালোবাসা।
আপনার নার্ভাস সিস্টেম আর চিৎকার চায় না—চায় একটু আদর।