“আগে চিন্তা করতাম—আজ কীভাবে কাজের সূচনা করবো। এখন AI-ই জানিয়ে দেয় কোন কাজটা আগে, কোনটা পরে।” — এমন মন্তব্য এখন কেবল স্টার্টআপ ফাউন্ডার নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানির সিইওদের মুখেও।
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির বিকাশ যেমন দ্রুত ঘটছে, তেমনি বদলে যাচ্ছে বড় কর্মকর্তাদের কাজের ধরনও। আগে যেখানে মিটিং সেট করা, রিপোর্ট পড়া বা মেইল ফিল্টার করাও ছিল বড় সময়সাপেক্ষ কাজ, এখন এআই—বিশেষ করে কনভারসেশনাল এআই ও কপাইলট প্রযুক্তি—এইসব দায়িত্ব ধীরে ধীরে নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছে। ফলাফল? সময় বাঁচছে, মান বাড়ছে, আর সিদ্ধান্তগুলো হয়ে উঠছে আরও গুছানো।
শুধু টুল নয়—এআই এখন ‘থিংকিং পার্টনার’
OpenAI-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান নিজেই বলেন, “ChatGPT আমার থিংকিং পার্টনার। আমি প্রতিদিন ওর কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখি।”
তিনি কেবল অফিসিয়াল ইমেইল ফিল্টার করেন না, বরং:
- অফিসের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বেসিক আইডিয়া যাচাই করেন
- ট্রেন্ডিং মার্কেট বা প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে চান
- এমনকি প্রাইভেট লাইফে কী কিনবেন, কোন রেসিপি ভালো হবে—সেসবও জিজ্ঞেস করেন
এভাবেই একজন টেকনোলজি নির্মাতা হয়ে উঠেছেন একজন এআই ইউজারও।
সত্য নাদেলা: “AI is my brilliant assistant”
Microsoft-এর সিইও সত্য নাদেলা তার কোম্পানির তৈরি Copilot AI ব্যবহার করে প্রতিদিনের কাজ আরও কার্যকরভাবে সম্পাদন করেন। তার মতে:
“একটা মিটিং শেষে যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে কী বলা হয়েছে, AI-ই বলে দেয়। এটা যেন আমার চোখ-কান-মাথা—সব একসঙ্গে।”
তিনি Copilot দিয়ে:
- দীর্ঘ রিপোর্টের সারসংক্ষেপ পান
- অজানা বিষয় দ্রুত বোঝেন
- বিদেশি লেখকদের লেখাও বুঝতে পারেন ব্যাখ্যা চেয়ে
টিম কুক: এআই ব্যবহারে দায়িত্বশীল হোন
Apple-এর সিইও টিম কুক নিজেই স্বীকার করেন যে, তিনি AI ব্যবহার করেন ইমেইল সাজানো, লেখার স্টাইল ঠিক করা, বা কাজের প্রাথমিক পরিকল্পনা নিতে। তবে তিনি একটি বিষয় স্পষ্ট করেন:
“AI ব্যবহারে দায়িত্ব নিতে হয়। আমরা যা ইনপুট দিই, সেটাই আমাদের ফিডব্যাক দেয়। তাই সতর্ক থাকতে হয়।”
তিনি নিজে যেমন AI-এর ব্যবহার করেন, তেমনি তার কোম্পানিও Apple Intelligence চালু করছে, যেখানে এআই হবে একদম ব্যক্তিগত ও নিরাপদ।
এআই কীভাবে সহকারী হয়ে উঠছে?
১. মিটিং রেক্যাপ ও টু-ডু লিস্ট: এখন আর সেক্রেটারির দরকার নেই; Copilot বা Notion AI থেকে মিটিংয়ের সারাংশ ও কাজের লিস্ট পাওয়া যাচ্ছে।
২. ডকুমেন্ট অ্যানালাইসিস: দীর্ঘ রিপোর্ট, আইনগত ডকুমেন্ট, বা গবেষণা পেপার—সব AI কয়েক সেকেন্ডে বিশ্লেষণ করে।
৩. ইমেইল ফিল্টারিং ও রেসপন্স সাজেশন: অফিসের শত শত ইমেইলের ভিড়ে AI সাজিয়ে দেয় কোনটি গুরুত্বপূর্ণ, আর কোনটায় কী উত্তর দেওয়া যায়।
৪. চিন্তাভাবনার সংগঠক: অনেক সময়ই বড় বড় কর্মকর্তারা একাধিক চিন্তায় বিভ্রান্ত হন। AI সেই চিন্তাগুলোকে সাজিয়ে দেয় যুক্তিসম্মত কাঠামোতে।
শুধু অফিস নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও AI
এআই এখন শুধু কর্পোরেট কাজে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক সিইও AI ব্যবহার করছেন—
- শিশুর পড়াশোনা বুঝতে
- ডায়েট প্ল্যান বানাতে
- বুক রেকমেন্ডেশন পেতে
- স্ট্রেস বা মেডিটেশন টুল হিসেবে
এভাবে এআই এখন হয়ে উঠেছে এক ‘ডিজিটাল বাডি’—যেটা সময় বাঁচায়, ভাবনায় সহায়ক হয়, আর ভুল কমায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও কী সম্ভব?
অবশ্যই। বাংলাদেশের উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার বা স্টার্টআপ ফাউন্ডাররাও আজ চাইলে AI ব্যবহার করে নিজেদের:
- কাস্টমার সাপোর্ট অটোমেট করতে পারেন
- সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট সাজাতে পারেন
- মার্কেট রিসার্চ করতে পারেন মাত্র কয়েক মিনিটে
- ডকুমেন্টস রিভিউ বা ইমেইল ম্যানেজ করতে পারেন অনায়াসে
বিশ্বের বড় কর্মকর্তারা যখন AI কে সহকারী বানিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন আমাদের জন্য এটি কেবল ‘চমক’ নয়, বরং সময়োপযোগী টুল হয়ে উঠছে।
সতর্কতার জায়গা
AI দিয়ে কাজ সহজ হচ্ছে, কিন্তু:
- সব তথ্য যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না
- প্রাইভেসি ও ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করুন
- নিজের স্কিল বাড়াতে AI ব্যবহার করুন, নির্ভরতা না
AI আপনার সহযোগী, আপনার বদলি নয়।
একটা সময় ছিল যখন বড় বড় কোম্পানির সিইওদের ঘিরে থাকতেন অসংখ্য অ্যাসিস্ট্যান্ট। এখন সেই ভূমিকার বড় অংশটাই নিতে শুরু করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সময়ের সঙ্গেই আমরা বদলাই, আর এখনকার সময়ের ডাক—AI-এর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটা।
আজ থেকে শুরু করুন। হয়তো আপনি এখনই একজন সিইও নন, কিন্তু যেভাবে AI আজকের সিইওদের সহকারী—ঠিক সেভাবেই আপনাকেও এগিয়ে দিতে পারে। শুধু প্রয়োজন—খোলা মন, শেখার ইচ্ছে আর একটু সচেতনতা।