back to top
সোমবার, আগস্ট ২৫, ২০২৫
HomeInspirationYouth Achieverবাংলাদেশি তরুণ হানজালা: BUP থেকে ডাবলিনের Meta-তে সিস্টেম ডিজাইনারের অনুপ্রেরণাময় পথচলা

বাংলাদেশি তরুণ হানজালা: BUP থেকে ডাবলিনের Meta-তে সিস্টেম ডিজাইনারের অনুপ্রেরণাময় পথচলা

একদিন হয়তো আপনি ধানমন্ডির কোনো ক্যাফেতে বসে আছেন, হাতে মোবাইল, ফেসবুক স্ক্রল করছেন। হঠাৎ মনে হলো—এই প্ল্যাটফর্মটা তো কোটি কোটি মানুষ ব্যবহার করে, কিন্তু এর ভেতরের জটিল সিস্টেমগুলো কারা বানায়?

ভাবুন তো, সেই সিস্টেমের নেপথ্যে আছেন ঢাকার এক তরুণ, যিনি কয়েক বছর আগেও ছিলেন আপনার মতোই একজন ছাত্র। রিকশাভাড়া মেলাতে হিমশিম খাওয়া, পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়া, আর বন্ধুর সাথে ভবিষ্যৎ নিয়ে অগণিত আলোচনায় ডুবে থাকা সেই তরুণ আজ দাঁড়িয়ে আছেন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে, Meta-র আঞ্চলিক হেডকোয়ার্টারে।

তিনি হলেন হানজালা বিন সুলতান—BUP-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী, যিনি এখন ডিজাইন করছেন এমন লার্জ-স্কেল সিস্টেম, যা প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষের পেমেন্ট ও অনলাইন ইন্টারঅ্যাকশনের অভিজ্ঞতা গড়ে দিচ্ছে।

১. ঢাকা থেকে BUP: স্বপ্নের বীজ

হানজালা বড় হয়েছেন ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন Bangladesh University of Professionals (BUP)-এ। অনেক শিক্ষার্থীর মতো তাঁরও শুরুটা ছিল সীমিত রিসোর্সে, কিন্তু সীমাহীন স্বপ্নে।

BUP-এর ক্লাসরুম, গ্রুপ প্রেজেন্টেশন আর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তাঁকে নতুনভাবে তৈরি করেছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন—ভবিষ্যতের সাফল্য শুধু বই মুখস্থ করে নয়; দলগত কাজ, উপস্থাপনার দক্ষতা আর আত্মবিশ্বাস দিয়েই গড়ে ওঠে।

২. Pathao: স্টার্টআপে প্রথম পাঠ

ডিগ্রির পর প্রথম পেশাগত যাত্রা ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্টার্টআপ Pathao-তে। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনির ভূমিকায় কাজ করতে গিয়ে তিনি শিখলেন—একটি দ্রুত গতির কোম্পানিতে কীভাবে অভিযোজনশীল হতে হয়।

এখানে তিনি দেখলেন, কিভাবে ডেটা আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাজারো মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধান করা যায়। তাঁর জন্য এটি ছিল বাস্তব জীবনে টেকনোলজির প্রভাব দেখার প্রথম সুযোগ।

৩. Unilever: বহুজাতিক কর্পোরেটের স্কুল

পরবর্তী অধ্যায় ছিল Unilever Bangladesh। কর্পোরেট দুনিয়ার পেশাদার কালচার, ই-কমার্স ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অভিজ্ঞতা তাঁকে নতুন এক ভুবন দেখালো।

এখানে তিনি বুঝলেন বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্ত নিতে ডেটা, প্রসেস আর কৌশলের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কর্পোরেট অভিজ্ঞতাই তাঁকে পরে আন্তর্জাতিক মানের ইন্টারভিউতে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

৪. Meta-তে ডাক

২০২১ সালের দিকে হানজালার জীবনে আসে বড় মোড়। একদিন Meta-র একজন রিক্রুটার তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন। শুরু হয় কঠিন ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া। ইন্টারভিউতে শুধু টেকনিক্যাল জ্ঞান নয়—প্রশ্ন ছিল ক্রিটিকাল থিঙ্কিং, সহযোগিতা, এবং Meta-র ভ্যালুর সাথে সামঞ্জস্য নিয়েও।

হানজালা সেখানে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিলেন— “আমি বাংলাদেশের ডিজিটাল ব্যবহারকারীদের ভালো জানি, তাদের আচরণ বোঝাই আমার শক্তি।” এই জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও শেখার মানসিকতাই তাঁকে Meta-তে সুযোগ এনে দেয়।

৫. ডাবলিনে নতুন দায়িত্ব

আজ হানজালা কাজ করছেন Meta Ireland Regional Headquarters-এ। তাঁর মূল কাজ—লার্জ-স্কেল সিস্টেম ডিজাইন করা। বিশেষ করে Meta-র পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর লেনদেন যাতে নিরাপদ, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য হয়—সে দায়িত্ব তাঁর দলের ওপর।

এখানে শুধু কোডিং নয়; প্রতিদিন দরকার আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা, টিমওয়ার্ক আর Emotional Intelligence। বিভিন্ন দেশের সহকর্মীদের সাথে কাজ করে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা মিটিয়ে একসাথে সমাধান খুঁজে বের করা তাঁর নিত্যদিনের অংশ।

বাংলাদেশের তরুণদের জন্য শিক্ষা

হানজালার গল্প বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য এক অনুপ্রেরণা।

  • তিনি দেখিয়েছেন, শুরুটা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই হোক, গ্লোবাল কোম্পানিতে পৌঁছানো সম্ভব।
  • Pathao বা Unilever-এর মতো অভিজ্ঞতাও গ্লোবাল ক্যারিয়ারে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।
  • সবচেয়ে বড় শিক্ষা—সুযোগ ছোট হলেও তাকে অবহেলা করবেন না। প্রতিটি ধাপ একদিন কাজে লাগবে।

কেন এই গল্প গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশে অনেক তরুণ মনে করেন—“বিদেশি ডিগ্রি বা অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বড় কিছু সম্ভব নয়।”

হানজালা প্রমাণ করেছেন, বাস্তবতা ভিন্ন। আপনি যদি শেখার মানসিকতা ধরে রাখেন, নতুন চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানান, আর আত্মবিশ্বাস বজায় রাখেন—তাহলেই একদিন আন্তর্জাতিক টেক জায়ান্টেও জায়গা করে নেওয়া সম্ভব।

ছোট পদক্ষেপেই বড় স্বপ্ন

ঢাকা থেকে BUP, সেখান থেকে Pathao, তারপর Unilever, আর শেষে Meta—এই যাত্রা প্রমাণ করে, সাফল্য কখনো এক লাফে আসে না। এটা আসে ধাপে ধাপে, শেখার ইচ্ছা আর ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে। আজকের তরুণরাও যদি ছোট থেকে শুরু করেন, তবে একদিন বলতে পারবেন— “আমি খুঁজিনি শর্টকাট, আমি খুঁজেছি পথ। আর সেই পথই আমাকে নিয়ে গেছে আমার স্বপ্নের জায়গায়।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular