back to top
সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫
HomeInspirationগ্রাম থেকে ঢাকায়: দীপ্তির লড়াই কীভাবে বদলে দিল নারীদের জন্য প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

গ্রাম থেকে ঢাকায়: দীপ্তির লড়াই কীভাবে বদলে দিল নারীদের জন্য প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

দীপ্তি যখন প্রথম ঢাকায় আসে, তখন তার স্যান্ডেলের একপাশ ছেঁড়া, কাঁধে পুরোনো কাপড়ের ব্যাগ আর চোখে একটা স্বপ্ন—“নিজের পায়ে দাঁড়াবো।”

এক বন্ধুর বাসায় থেকে ইউনিভার্সিটি ভর্তি কোচিং শুরু করে। শহরের ছেলেমেয়েরা যখন ক্যাফেতে আড্ডা দিচ্ছে, দীপ্তি তখন রাত ১১টায় হোস্টেলের ছাদে বসে নিজেকে বলছে—“আমি পারবো।”

আজ সে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকার একটি নামী আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, পরিবারে প্রধান উপার্জনকারী।

তবে এই যাত্রাটা মোটেও সোজা ছিল না।

প্রথম অধ্যায়: গ্রাম থেকে স্বপ্ন দেখা

দীপ্তির বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। বাবা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, মা গৃহিণী। তাদের পরিবারে মেয়েদের বেশি দূর পড়ানোর প্রচলন ছিল না।

“এসএসসি দেয়ার পরই আত্মীয়রা বলতে লাগল—বিয়ে দাও। মেয়ে তো মানুষ।”

তবে দীপ্তির ভেতরে ছিল অন্য রকম একটা আগ্রহ—কম্পিউটারের প্রতি টান, নিজের কিছু গড়ার তাড়না।

বাবা-মায়ের অল্প আয়ে কষ্ট হলেও, তারা একটাই কথা বলতেন:

“তুমি যদি সত্যি চাইো, আমরা খেয়ে না খেয়ে হলেও তোর পড়াশোনা চালাবো।”

দ্বিতীয় অধ্যায়: শহরে এসে টিকে থাকার লড়াই

ঢাকায় এসে প্রথম যে চ্যালেঞ্জে পড়ে, সেটা ভাষা ও আত্মবিশ্বাস।

“ক্লাসে সবাই ইংরেজিতে কথা বলে। আমি কিছুই বুঝি না। প্রশ্ন করতে গেলে ভয় পেতাম—‘সবার সামনে হাসবে না তো?’”

ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেঁদেছে অনেক রাত। কিন্তু তবু ছাড়েনি।

  •  প্রতিদিন ৫টি নতুন ইংরেজি শব্দ মুখস্থ করত।
  • ভিডিও দেখে প্রেজেন্টেশন প্র্যাকটিস করত।
  • কোচিংয়ের পরে টিউশন করত, মাসে ২৫০০ টাকা পেত—তাতেই চলত খরচ।

তৃতীয় অধ্যায়: যখন নিজেকে ‘প্রমাণ’ করতে হয়

গ্রামে “মেয়ে” মানেই—চুপচাপ, ঘরের কাজ জানে এমন একটা রোল মডেল। কিন্তু দীপ্তি যখন বলল—“আমি প্রোগ্রামার হতে চাই”, তখন অনেকে বলল:

“ছেলে না হয়ে এসব করছে কেন?”

তবে নিজেকে থামায়নি। নিজেই ইউটিউব দেখে কোড শেখে, অনলাইন ফোরামে গিয়ে সমস্যা সমাধান করে।

ফাইনাল ইয়ারে এসে এক বন্ধু বলল, “ফ্রিল্যান্সিং করবি?”

এই একটা প্রশ্ন তার জীবন বদলে দেয়।

ফাইভার, আপওয়ার্ক, গিগ—সব শিখে নেয়। রাত জেগে কাজ করে ক্লায়েন্ট ধরে, ১০ ডলার আয় করতে যা কষ্ট—শুধু সেই জানে।

চতুর্থ অধ্যায়: যখন গ্রাম-শহরের দূরত্ব ঘোচে

দীপ্তি এখন ৫ জন নারীকে শেখাচ্ছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, যাদের কেউ একজন অটো রিকশাচালকের মেয়ে, কেউ গার্মেন্টস কর্মী।

“আমি চেয়েছিলাম, গ্রামের মেয়েরাও বুঝুক—আমরাও পারি।”

তার প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগের নাম—“Code for She”।

বাংলাদেশে গ্রাম থেকে উঠে আসা নারীদের বাস্তবতা কেমন?

  • বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্যে দেখা যায়, গ্রামের মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ শহরের তুলনায় প্রায় ৪৫% কম।
  • মেয়েরা যদি উচ্চশিক্ষা বা কর্মজীবনে এগিয়ে যেতে চায়, বাধা হয়:
  • অর্থনৈতিক সংকট
  • সামাজিক মানসিকতা (“মেয়েরা বেশি পড়াশোনা করলে বিয়ে হয় না”)
  • নিরাপত্তার অভাব (শহরে থেকে পড়া কঠিন)
  • আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি

কিন্তু পরিবর্তন আসছে—এবং তার চালিকা শক্তি হচ্ছেন আপনি

  • এখন হাজার হাজার নারী অনলাইন কাজ, উদ্যোক্তা বা চাকরির মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন।
  • হাজারো গ্রামের মেয়ে ফেসবুক গ্রুপ, ইউটিউব, ও অনলাইন কোর্স থেকে শিখছে ফ্রিল্যান্সিং, ডিজাইনিং, বা কোডিং।

দীপ্তির ৫টি শিক্ষা—যা আপনার পথ বদলাতে পারে

১. সবার মত হতে হবে—এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন

আপনি আলাদা হতে পারেন, সেটাই আপনার শক্তি।

২. নিরবেই নিজেকে প্রমাণ করুন

তর্ক নয়, কাজ দিয়ে দেখান।

৩. অভিভাবকদের বোঝান, ভয় নয়—স্বপ্ন দেখান

পরিবারের সম্মতি পেতে গেলে বাস্তবতা দেখাতে হয়।

৪. একটা স্কিল গড়ে তুলুন

আপনি যদি টাইপিং, ডিজাইন, বা হ্যান্ডিক্রাফট—যেকোনো একটা জিনিসে ভালো হন, সেটা হতে পারে আপনার ক্যারিয়ারের শুরু।

৫. ভালোবাসা দিয়ে, সাহস নিয়ে এগিয়ে যান

আপনি যে জায়গা থেকে আসছেন, সেটা বাধা নয়—আপনার অনুপ্রেরণা।

আপনার গ্রাম আপনাকে আটকে রাখে না—আপনার ভয়টাই রাখে

আপনি যে গ্রাম থেকে এসেছেন, সেখানকার মাঠ, ধানক্ষেত, কাঁদা-পানির স্কুল—সেই জায়গাগুলো আপনাকে বানিয়েছে লড়াকু।

আপনি যদি শহরে এসে হার না মানেন, তাহলে একদিন সেই গ্রামের মেয়েরাই আপনাকে দেখে স্বপ্ন দেখবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular