আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ: এখন কী করণীয়?
২০২০ সালের সেই দুঃসহ দিনগুলো আমরা কেউ ভুলিনি। করোনা শুধু আমাদের স্বাস্থ্য নয়, আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা, সম্পর্ক—সবকিছুকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে আমরা টিকা, স্বাস্থ্যবিধি, সচেতনতা দিয়ে সেই ভয়াবহতা কিছুটা সামলে উঠলেও—আবারও বাংলাদেশে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ।
এখনই সময়, অবহেলা না করে সচেতন হওয়ার। মনে রাখতে হবে, ভাইরাস এখন আগের মতো মারাত্মক নাও হতে পারে, কিন্তু অবহেলা করলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই আসুন জেনে নিই, এখন আমাদের করণীয় কী—
✅ ১. মাস্ক ব্যবহার: সুরক্ষার প্রথম শর্ত
জনবহুল জায়গায় মাস্ক না পরা এখনো বড় ঝুঁকি।
বিশেষ করে—
- গণপরিবহন, মার্কেট, অফিসে
- হাসপাতালে ভিজিট বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া
- হাঁচি-কাশি আছে এমন কারো সংস্পর্শে আসলে
সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরুন। কাপড়ের পরিবর্তে মেডিকেল মাস্ক বেশি কার্যকর।
✅ ২. হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার
হাতে ভাইরাস থাকার পর, চোখ-মুখে হাত দিলেই দ্রুত সংক্রমণ হয়।
তাই—
- ঘর বা অফিসে প্রবেশের আগে
- খাবার খাওয়ার আগে-পরে
- বাহির থেকে ফিরেই
👉 সাবান ও পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধুয়ে ফেলুন। যেখানে পানি নেই, সেখানে ৬০% অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
✅ ৩. হালকা উপসর্গেও টেস্ট করান ও আইসোলেশনে যান
হালকা জ্বর, গলা ব্যথা, সর্দি বা কাশি—এগুলো অবহেলা না করে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করান।
- পজিটিভ হলে নিজেকে আলাদা রাখুন
- অফিস/স্কুলে যাওয়া বন্ধ করুন
- পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন
👉 দ্রুত আইসোলেশনই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া থামাতে পারে।
✅ ৪. টিকা ও বুস্টার ডোজ: ইমিউনিটির ঢাল
প্রথম ডোজ নেওয়া হয়েছে? বুস্টার নিয়েছেন কি?
করোনার ধরন বদলাচ্ছে, তাই শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি বজায় রাখতে টিকার আপডেট থাকা জরুরি।
- স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা অনলাইন থেকে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিন
- বয়স অনুযায়ী বা কো-মর্বিডিটি থাকলে অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন
✅ ৫. ঘরোয়া সতর্কতা বজায় রাখুন
- বাড়ির প্রবেশপথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা
- ঘনঘন ব্যবহৃত জিনিস (ডোর হ্যান্ডেল, মোবাইল, রিমোট) পরিষ্কার করা
- শিশু ও বয়স্কদের বিশেষভাবে সুরক্ষিত রাখা
- রোগী থাকলে আলাদা রুম ও টয়লেট ব্যবহারের ব্যবস্থা
✅ ৬. সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবে কান দেবেন না
লেবু খেলে করোনা হবে না, গরম পানিতে সেরে যাবে—এমন ভুল তথ্য শেয়ার করবেন না।
👉 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যই অনুসরণ করুন।
✅ ৭. মানসিক স্বাস্থ্যেও নজর দিন
আবার করোনা শোনা মাত্রই কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
- পরিবারে সময় কাটান
- নিয়মিত ব্যায়াম ও ঘুম নিশ্চিত করুন
- একাকীত্ব অনুভব করলে কথা বলুন কাউন্সেলরের সাথে
👉 ভয় নয়, সচেতনতাই হতে পারে সেরা প্রতিক্রিয়া।
করোনা হয়তো আবার আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে, কিন্তু এবার আমরা প্রস্তুত।
আমরা জানি—
- কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হয়
- কিভাবে পরিবার ও সমাজকে নিরাপদ রাখা যায়
- কিভাবে তথ্য যাচাই করে গুজব এড়িয়ে চলা যায়
চলুন, আবারও একসাথে সচেতন হই। কারণ প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন, বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখুন।