ঈদ মানেই খুশির উৎসব, আত্মীয়-পরিজনের মিলন আর সুস্বাদু খাবারের ভরপুর আয়োজন। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে গরুর বা খাসির মাংস, নেহারি, কাবাব, রেজালা, সেমাই, ফিরনি—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম ভোজের আমেজ। কিন্তু এই অতিরিক্ত খাওয়াই অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে—বিশেষ করে যাদের কোলেস্টেরল নিয়ে সমস্যা রয়েছে বা পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে।
তাই ঈদের আনন্দে শরীরের ক্ষতি না করে চলুন জেনে নিই কীভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ঈদের সময়েও।
১. লাল মাংস কম খান, কিন্তু সম্পূর্ণ বাদ নয়
কোরবানির ঈদে গরু বা খাসির মাংস খাওয়া এক ঐতিহ্য। তবে মনে রাখতে হবে—
-
লাল মাংসে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল বাড়ায়।
-
চেষ্টা করুন মাংসের চর্বি অংশ বাদ দিয়ে খেতে।
-
পরিমাণে সীমিত রাখুন—প্রতি বেলায় ৫০-৭০ গ্রাম-এর বেশি নয়।
-
গ্রিল, সেদ্ধ বা হালকা তেলে রান্না করা পদ বেছে নিন; ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
২. ঈদের রেসিপিতে সামান্য পরিবর্তন আনুন
-
তেল কম ব্যবহার করুন—গরুর মাংস নিজেই অনেক তেল ছাড়ে।
-
রান্নায় সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
-
মশলা কম দিন—মসলা ও লবণ কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. প্লেটে রাখুন সবজি ও সালাদ
প্রতিবার খাবারের সঙ্গে অন্তত ১ বাটি সালাদ বা সেদ্ধ সবজি রাখার চেষ্টা করুন। যেমন—
-
শসা, গাজর, ধনেপাতা, পেঁয়াজ ও টমেটো দিয়ে তৈরি সালাদ
-
বাটারহীন ভেজিটেবল স্যুপ
সবজি ফাইবার সরবরাহ করে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল বের করতে সহায়তা করে।
৪. খাওয়ার পর হালকা হাঁটা বা এক্সারসাইজ
ঈদের সময়ে আমরা অনেকেই খাওয়ার পর বসে পড়ি বা ঘুমিয়ে যাই। এটা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে।
-
খাওয়ার ৩০ মিনিট পর ১৫–২০ মিনিট হাঁটুন
-
ছাদে হাঁটা, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা বা বাসার ভেতর চলাফেরা করলেও উপকার পাবেন
৫. মিষ্টি খাওয়া কমান
সেমাই, জর্দা, ফিরনি—সবই মুখরোচক। কিন্তু এতে থাকে চিনি ও কনডেন্সড মিল্ক, যা ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়, যা কোলেস্টেরলেরই এক রূপ।
-
চেষ্টা করুন স্বল্প চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি খেতে
-
ছোট পরিমাণে খান, বারবার না
৬. স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন, ঘুম ঠিক রাখুন
ঈদের ব্যস্ততা, অতিথি সামলানো বা কাজের চাপ—এই সবই স্ট্রেস হরমোন (Cortisol) বাড়িয়ে দেয়, যা কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়ক।
-
প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন
-
কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন—হালকা ধ্যান, গান শোনা বা গল্প করা
৭. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
গরমে, রান্নাঘরে কাজ করতে করতে আমরা অনেকেই পানি পান ভুলে যাই। অথচ পানি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং লিভারকে সচল রাখে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
-
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
-
সঙ্গে ডাবের পানি বা ঘরোয়া হালকা ডিটক্স ড্রিংক খেতে পারেন
৮. ওষুধ বা নিয়মিত চেকআপ চালিয়ে যান
যাদের কোলেস্টেরল সংক্রান্ত ওষুধ চলছে, ঈদের ব্যস্ততায় ভুলে যাবেন না। পাশাপাশি—
-
ঈদের ১-২ সপ্তাহ পর একবার কোলেস্টেরল লেভেল চেক করিয়ে নিতে পারেন
-
হঠাৎ বুক ধড়ফড়, মাথা ঘোরা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করলে অবহেলা করবেন না
ঈদ মানেই উৎসব, কিন্তু সুস্থতা থাকলেই সে উৎসবের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করা যায়। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রেখে, কিছুটা সচেতন হয়ে খেলে আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন, তেমনি পরিবারের সঙ্গেও কাটবে আনন্দঘন সময়।
স্বাদ আর সচেতনতার সুন্দর মিলনে হোক এবারের ঈদ! ❤️