মিরপুরের এক সাধারণ ছেলেকে কেউ ভাবেনি একদিন সে Microsoft-এর মতো গ্লোবাল জায়ান্টের নেতৃত্বে থাকবে। কিন্তু আজ মোহাম্মদ আসিফুজ্জামান সেই স্থানেই। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (BUP) থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করা এই তরুণ এখন Microsoft 365 ডিভিশনের Operations Lead হিসেবে কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
স্বপ্ন দেখার শুরুটা ছোটবেলায়
ছোটবেলায় আসিফুজ্জামানের স্বপ্ন ছিল পাইলট, সেনাবাহিনীর অফিসার, বা সায়েন্টিস্ট হওয়ার। সেই সময়েই প্রযুক্তির প্রতি তার আগ্রহ জন্মায় বিভিন্ন টেক ম্যাগাজিন পড়ে। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় মিরপুরের BCIC স্কুলে, এরপর GPA 5 পেয়ে এসএসসি এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি। পরবর্তীতে তিনি BUP-এ ভর্তি হন, যেখানে তার CGPA ছিল ৩.৫৭। এরপর একটি অংশগ্রহণমূলক স্কলারশিপে যান যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যালেন্সিয়া কলেজে এবং সেখানেও ৪.০০ CGPA নিয়ে President’s Honor অর্জন করেন।
৭ম শ্রেণি থেকেই Microsoft-এর স্বপ্ন
২০১৪ সালে Microsoft Bangladesh আয়োজিত একটি অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপে অংশ নেন তিনি। আশেপাশের সবাই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আর তিনি তখন মাত্র ক্লাস সেভেনে। সেদিনই সিদ্ধান্ত নেন—”একদিন আমিও Microsoft Student Partner হব।“
সেই স্বপ্ন পূরণ করেন ২০২০ সালে BUP-এর ২য় বর্ষে Microsoft Learn Student Ambassador (MLSA) হয়ে। এরপর শুরু হয় গ্লোবাল কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়ার আসল যাত্রা।
সেখান থেকে Microsoft পর্যন্ত
BUP-তে MLSA Chapter প্রতিষ্ঠা করেন আসিফ, যা তাকে যুক্ত করে ফ্লোরিডা, আটলান্টা ও ওয়াশিংটনের টেক ইন্ডাস্ট্রির সাথে। তিনি কাজ করেন বিভিন্ন ইন্টার্নশিপ ও প্রজেক্টে, যা তাকে করে তোলে ইন্ডাস্ট্রি-রেডি।
২০২৩ সালের আগস্টে Microsoft-এ টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পান। মাত্র দুই মাসের মধ্যে পদোন্নতি পেয়ে হয়ে ওঠেন Microsoft 365 টিমের টেকনিক্যাল লিড। কিছুদিন পর, কোম্পানির রি-স্ট্রাকচারের ফলে Operations Lead পদের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী খোঁজা হচ্ছিল। আর আসিফ তার টেকনিক্যাল দক্ষতা, নেতৃত্বগুণ এবং গ্লোবাল এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে সেই সুযোগ কাজে লাগান।
মাত্র ৩ মাসে তিনি Microsoft 365 অ্যাডভাইজরি অপারেশনসকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্লোবাল লেভেলে নিয়ে যান।
Copilot-এর পেছনের মানুষ
২০২৪ সালে Microsoft Copilot প্রজেক্ট শুরু হলে আসিফ এই ইনিশিয়েটিভের টেকনিক্যাল প্ল্যানিং ও কাস্টমার স্ট্র্যাটেজি ডিজাইনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। Machine Learning ব্যবহার করে কাস্টমার ইন্টারঅ্যাকশন থেকে রিয়েল-টাইম ফিডব্যাক নিয়ে Copilot কীভাবে বিজনেসে সাহায্য করতে পারে তা তুলে ধরেন।
এই প্রোডাক্ট-লেড স্ট্র্যাটেজি এতটাই সফল হয় যে এখন সেটি গ্লোবালি স্কেল করা হচ্ছে।
CGPA নয়, প্রমাণ আপনার কাজ
CGPA কি বড় কোম্পানিগুলোর জন্য বাধা? আসিফ বলেন—না, যদি আপনি দেখাতে পারেন আপনি কী বানিয়েছেন। “আপনি যদি হ্যাকাথন, প্রজেক্ট আর বাস্তব অভিজ্ঞতায় দক্ষ হন, তাহলে CGPA তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়—বিশেষ করে টেকনিক্যাল বা ইন্ডাস্ট্রি-ভিত্তিক রোলে।”
শুধু সফটওয়্যার নয়, অপারেশনস ও নেতৃত্বেও আছে সুযোগ
আজকের স্টুডেন্টদের অনেকেই শুধু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান। কিন্তু প্রযুক্তি দুনিয়ায় অপারেশনস, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট, স্ট্র্যাটেজি—সবই গুরুত্বপূর্ণ।
আসিফ বলেন, “তুমি যদি নিজের স্ট্রেন্থ চিনতে পারো, তাহলে নিজের জন্য সঠিক পথ খুঁজে নিতে পারবে।”
তরুণদের জন্য পরামর্শ
“টেকনোলজি বোঝো, শেখার আগ্রহ রাখো। আর লিডারশিপ শুরু করো আজ থেকেই—ক্লাব, কমিউনিটি বা ছোট কোনো ইনিশিয়েটিভ থেকেই হোক। Execution-ই আসল শক্তি।” — মোহাম্মদ আসিফুজ্জামান
SpikeStory-র মতো প্ল্যাটফর্মের জন্য, এই গল্প শুধু অনুপ্রেরণার নয়—এটা প্রমাণ করে দেয়, আপনি যদি সঠিকভাবে শেখেন, নেতৃত্ব দিতে শিখেন এবং ঝুঁকি নিতে জানেন, তাহলে Microsoft-ও একদিন আপনার পরিচিত জায়গা হয়ে উঠতে পারে।
👉 আপনি কী ভাবছেন এখন? আপনারও কি এমন একটা স্বপ্ন আছে, যা সবাই অসম্ভব বলে মনে করে? আজই শুরু করুন। কারণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর সুযোগ যেখানে একসাথে মেলে—সেখানেই তৈরি হয় পরবর্তী SpikeStory।