back to top
বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
HomeBusinessসোনায় বিনিয়োগ বনাম শেয়ারবাজার: ২০২৫ সালে কোনটা বেশি লাভজনক?

সোনায় বিনিয়োগ বনাম শেয়ারবাজার: ২০২৫ সালে কোনটা বেশি লাভজনক?

বিনিয়োগের কথা আসলেই আমাদের মনে প্রথমেই দুটি জিনিস আসে—সোনা আর শেয়ারবাজার। আমাদের দেশে বাবা-মা থেকে শুরু করে আত্মীয়রা পর্যন্ত সবাই বলেন, “সোনা কিনে রাখো, এর দাম কখনো কমে না।” অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম বলে, “শেয়ারবাজারেই আসল টাকা।”

কিন্তু আসলে কোনটা বেশি লাভজনক? আসুন সহজ ভাষায় জেনে নিই।

সোনায় বিনিয়োগ: নিরাপদ কিন্তু ধীর

সোনার সুবিধাগুলো:

১. মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা সোনা সব সময় মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলে। মানে টাকার দাম কমলেও সোনার দাম বাড়ে। এজন্য আপনার ক্রয়ক্ষমতা ঠিক থাকে।

২. সহজ বেচাকেনা সোনা যে কোনো সময় বিক্রি করা যায়। জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক নগদ টাকায় রূপান্তর করা সম্ভব।

৩. কোনো দক্ষতার প্রয়োজন নেই শেয়ারবাজারের মতো গবেষণা বা বিশ্লেষণের দরকার নেই। কিনে রেখে দিলেই হয়।

৪. আন্তর্জাতিক মূল্য সোনার দাম বিশ্বব্যাপী প্রায় একই রকম। যে কোনো দেশে গিয়ে বিক্রি করা যায়।

সোনার অসুবিধাগুলো:

১. কম রিটার্ন গত ২০ বছরে সোনার গড় রিটার্ন বছরে ৮-১০%। এটি মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে সামান্য বেশি।

২. কোনো আয় নেই সোনা রেখে দিলে কোনো লভ্যাংশ বা সুদ পাওয়া যায় না।

৩. সংরক্ষণের খরচ সোনা সংরক্ষণের জন্য নিরাপত্তার ব্যয় আছে।

শেয়ারবাজার: ঝুঁকি বেশি কিন্তু রিটার্নও বেশি

শেয়ারবাজারের সুবিধাগুলো:

১. উচ্চ রিটার্ন দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজার গড়ে ১২-১৫% রিটার্ন দিতে পারে। ভালো কোম্পানির শেয়ারে এটি আরও বেশি।

২. লভ্যাংশের আয় প্রতি বছর কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দেয়। এটি একটি অতিরিক্ত আয়।

৩. কম পুঁজিতে শুরু মাত্র ৫০০-১০০০ টাকা দিয়েও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করা যায়।

৪. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতি ভালো হলে শেয়ারবাজারেরও দাম বাড়ে।

শেয়ারবাজারের অসুবিধাগুলো:

১. উচ্চ ঝুঁকি শেয়ারের দাম একদিনেও ১০-২০% কমে যেতে পারে।

২. জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন কোন কোম্পানির শেয়ার কিনবেন সেটা বুঝতে গবেষণা দরকার।

৩. আবেগের প্রভাব লোভ ও ভয়ের কারণে অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বিষয় সোনা শেয়ারবাজার
রিটার্ন ৮-১০% ১২-১৫%
ঝুঁকি কম বেশি
তারল্য ভালো ভালো
প্রয়োজনীয় জ্ঞান কম বেশি
শুরুর পুঁজি বেশি কম
নিয়মিত আয় নেই আছে (লভ্যাংশ)

আপনার জন্য কোনটা উপযুক্ত?

সোনা বেছে নিন যদি:

  • আপনি ঝুঁকি নিতে চান না
  • বয়স ৫০+ এবং নিরাপত্তা চান
  • বিনিয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান কম
  • জরুরি ফান্ড হিসেবে রাখতে চান

শেয়ারবাজার বেছে নিন যদি:

  • বয়স ২৫-৪৫ বছর
  • দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে পারেন (১০+ বছর)
  • উচ্চ রিটার্ন চান
  • ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত
  • শেখার আগ্রহ আছে

আদর্শ পদ্ধতি: মিশ্র বিনিয়োগ

বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে ভালো হয় দুটিতেই বিনিয়োগ করা। একটি আদর্শ পোর্টফোলিও হতে পারে:

২০-৩০ বছর বয়সীদের জন্য:

  • ৭০% শেয়ারবাজার
  • ২০% সোনা
  • ১০% ব্যাংক/সঞ্চয়পত্র

৩০-৪৫ বছর বয়সীদের জন্য:

  • ৬০% শেয়ারবাজার
  • ৩০% সোনা
  • ১০% ব্যাংক/সঞ্চয়পত্র

৪৫+ বছর বয়সীদের জন্য:

  • ৪০% শেয়ারবাজার
  • ৪০% সোনা
  • ২০% ব্যাংক/সঞ্চয়পত্র

বিনিয়োগের আগে যা মনে রাখবেন

সোনা কেনার সময়:

১. সরকারি হলমার্ক দেখে কিনুন
২. মেকিং চার্জ কম এমন দোকান বেছে নিন
৩. গোল্ড ইটিএফ বা গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ডও বিবেচনা করুন

শেয়ারবাজারের জন্য:

১. প্রথমে মিউচুয়াল ফান্ড দিয়ে শুরু করুন
২. নিয়মিত SIP (Systematic Investment Plan) করুন
৩. একসাথে অনেক টাকা না লাগিয়ে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়ান
৪. দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন

সোনা আর শেয়ারবাজার—দুটিরই নিজস্ব গুণাগুণ আছে। সোনা নিরাপত্তা দেয়, আর শেয়ারবাজার দেয় উচ্চ রিটার্নের সুযোগ।

মূল কথা হলো, আপনার বয়স, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা, আর লক্ষ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করুন। একটিতেই সব টাকা না লাগিয়ে ভাগ করে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

মনে রাখবেন, বিনিয়োগে ধৈর্য আর ধারাবাহিকতাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আজই শুরু করুন আপনার বিনিয়োগ যাত্রা!

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular