বাংলাদেশের গর্ব স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম আবারও বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়ালেন। দ্বিতীয়বারের মতো তিনি জিতেছেন সম্মানজনক আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার ২০২৫। তাঁর নকশা করা জলবায়ু–সহনশীল ও বহনযোগ্য গৃহনকশা ‘খুদি বাড়ি’ এই পুরস্কার জয় করেছে।
কী এই ‘খুদি বাড়ি’?
‘খুদি বাড়ি’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা।
-
বাঁশ ও ইস্পাত দিয়ে তৈরি এই দুইতলা বাড়ি সহজে খোলা–জোড়া লাগানো যায়।
-
বন্যার সময় দ্বিতীয় তলা ব্যবহার করা যায় জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে।
-
খরচ কম, টেকসই এবং স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য উপকরণ দিয়েই নির্মাণযোগ্য।
বিচারকমণ্ডলী বলেছেন, প্রকল্পটিতে পরিবেশগত দূরদর্শিতা ও সামাজিক মানবিকতা উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বাঁশকে তাঁরা ভবিষ্যতের একটি বৈশ্বিক নির্মাণ উপাদান হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত
আগা খান পুরস্কারের ঘোষণায় নাম উঠে আসার পরই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন— “এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, মানবিকতার সৃজনশীল প্রতিফলন। বাংলাদেশের জন্য এটি এক বিরল ও ঐতিহাসিক অর্জন।”
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন মেরিনা তাবাশ্যুম এখন প্রথম বাংলাদেশি স্থপতি, যিনি দ্বিতীয়বার আগা খান পুরস্কার জিতলেন।
বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতির যাত্রা
এটি প্রথম নয়, এর আগেও মেরিনা তাবাশ্যুম বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন।
-
২০১৬: দক্ষিণখানে বাইতুর-রউফ মসজিদের নকশার জন্য আগা খান পুরস্কার জয়।
-
২০২০: ব্রিটিশ সাময়িকী Prospect–এর তালিকায় বিশ্বের সেরা ১০ চিন্তাবিদের একজন।
-
২০২১: মানবিক ঘর তৈরির জন্য যুক্তরাজ্যের মর্যাদাপূর্ণ RIBA সন পদক অর্জন।
-
২০২৪: টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় স্থান লাভ।
আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার: মর্যাদার মানচিহ্ন
১৯৭৭ সালে প্রয়াত প্রিন্স করিম আগা খান চতুর্থ এই পুরস্কার চালু করেন।
-
মূল লক্ষ্য: মুসলিম অধ্যুষিত সমাজের আশা–আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয় এমন স্থাপত্যকে সম্মান জানানো।
-
২০২৫ সালে সাতটি প্রকল্প নির্বাচিত হয়েছে—বাংলাদেশ, চীন, মিসর, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন এবং ইরানের দুটি প্রকল্প।
-
পুরস্কারের মোট অর্থমূল্য ১০ লাখ ডলার।
১৫ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেক–এ আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
কেন মেরিনা তাবাশ্যুম আলাদা?
স্থাপত্য মানেই কেবল সুন্দর নকশা নয়—বরং মানবিকতা, স্থিতিশীলতা ও দূরদর্শিতা। মেরিনা তাবাশ্যুমের নকশায় উঠে আসে:
-
প্রান্তিক মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা
-
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বাস্তব সমাধান
-
টেকসই উপকরণ ব্যবহারের অগ্রণী দৃষ্টান্ত
তাঁর স্থাপত্য প্রমাণ করে দিয়েছে, “স্থাপত্য মানে শুধু দালান নয়—এটা হতে পারে মানুষের মর্যাদা ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তার প্রতীক।”
‘খুদি বাড়ি’ শুধু একটি ঘর নয়, এটি বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম, অভিযোজন ও আশার গল্প। দ্বিতীয়বার আগা খান পুরস্কার জয় করে মেরিনা তাবাশ্যুম প্রমাণ করেছেন—বাংলাদেশের স্থপতিরা শুধু স্থানীয় নয়, বৈশ্বিক মানচিত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
👉 তাঁর এই অর্জন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।