সোমবার, আগস্ট ২৫, ২০২৫
HomeInspirationYouth Achieverওয়াইল্ড ওভেন: ঢাবির দুই তরুণের ২ লাখ টাকার স্টার্টআপ থেকে ৭ কোটি...

ওয়াইল্ড ওভেন: ঢাবির দুই তরুণের ২ লাখ টাকার স্টার্টআপ থেকে ৭ কোটি টাকার চামড়ার ব্র্যান্ড

একটা সময় ছিল, যখন দেশের কোনো ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক মানের চামড়াজাত পণ্য তৈরি করতে পারবে—এটাই ছিল অনেকের পরিবর্তে অসম্ভব। কিন্তু সেই ‘অসম্ভবের চিকন পথে’ একদিন চলার সাহস দুই তরুণ—এনামুল হক ও ফয়সাল ইসলামের—with just ২ লাখ টাকা, ৩টি মেশিন এবং একজন কারিগরের সহায়তায় তারা শুরু করেছিল ‘ওয়াইল্ড ওভেন’। আজ, ছয় বছরও না পেরোতেই তাদের বার্ষিক আয়—৭ কোটি টাকার প্রায়—এমনই অনুপ্রেরণাময় সেই গল্প।

ঢাবি থেকে উদ্যোক্তা: স্বপ্নের বীজ

২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ যখন পড়ছিলেন এনামুল আর ফয়সাল, তাদেরেই চামড়া শিল্পে ব্র্যান্ড তৈরির চিন্তা ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দেয়। এনামুলের বড় ভাইয়ের কারখানায় আড়াই বছর কাজ করে তিনি নিজে শিখেছিলেন চামড়াজাত পণ্য ও জ্যাকেট তৈরির দক্ষতা।

ঢাকার বাড্ডায় ২০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে খোলেন এক মনমানসিক কারখানা—পুঁজি মাত্র দু’লাখ, সেলাই মেশিন তিনটি আর একজন কারিগর নিয়ে যাত্রা শুরু হয় স্বপ্নের পথে।

‘ওয়াইল্ড ওভেন’-এর আজ: ৭ কোটি টাকার ছোঁয়া

ব্র্যান্ডের নাম ‘ওয়াইল্ড ওভেন’। ২০১৯ সালে শুরু, এখন তৈরি করে মানিব্যাগ, বেল্ট, ল্যাপটপ কাভার, জ্যাকেট, চাবির রিং—সবই পরিবেশবান্ধব চামড়া থেকে। ছয় বছরের কম সময়ে ব্যবসার আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকায়—যা দেশের এক ছোট করে শুরু হওয়া উদ্যোক্তার জন্য নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটা শুধু ব্যবসা নয়, দেশের চামড়াজাত পণ্যে নতুন একটি পরিচিতি—যা ধরে নেয়োনো যায় যে ব্র্যান্ডগুলোতে আত্মবিশ্বাস ও মান আরম্ভ হয় ছোট আইডিয়ায়, প্রেমে ও লেগে থাকার ধারায়।

কেন তারা সফল হলেন?

  • মানের সাথে কোনো আপস করেননি

  • ডিজাইন ও ব্র্যান্ডিংকে গুরুত্ব দিয়েছেন

  • সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেছেন মূল বিক্রয় চ্যানেল হিসেবে

  • গ্রাহকের ফিডব্যাককে পণ্যের উন্নতিতে কাজে লাগিয়েছেন

মহামারি, পথিকাঠি এবং নতুন কৌশল

২০২০ সালের করোনার আঘাতে তাঁদের কারখানা সাময়িক বন্ধ—১,৬০০ বর্গফুটে ৩৫ জন কর্মী, এবং অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল। কিন্তু হাল ছাড়েননি তাঁরা।

একটি উদ্যোগ ছিল অনলাইন বর্ধিত করা। পণ্যের সাথে KN95 মাস্ক ফ্রি যোগ করে প্রতিটি বিক্রি—শন ছয় মাসের এই প্রচারণা লাভের ৪০% খরচ করে আনলেও তৈরি করে মানুষের আস্থা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা।

দেশের চামড়া খাত: সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা

বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ leather producerদের মধ্যে পড়লেও, দেশি leather exports গত দশকে প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে—FY14 এ $397 মিলিয়ন থেকে FY22-23 এ হয়েছে $123 মিলিয়নের মতো। এটি ইঙ্গিত দেয়, মান আর আন্তর্জাতিক মানোদণ্ডে অনেক উন্নতির প্রয়োজন  ।

সম্প্রতি leather industry crises-ও নজিরবিহীন—raw hide এর দাম কমে, পরিবেশগত সমস্যা ও আইন প্রয়োগে ঘাটতি হলে industry-তে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ রউ leather নষ্ট হয়  ।

এক্ষেত্রে ‘ওয়াইল্ড ওভেন’ এর মতো উদ্যোগ শুধু ব্যবসায় নয়, দেশের leather industry-কে নতুন আশা দেখায়—কারণ তারা পরিবেশবান্ধব উপকরণ, অনলাইন বিক্রয় এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

‘ওয়াইল্ড ওভেন’-এর গল্প কেবল দুই তরুণের ব্যবসার গল্প নয়; এটা হলো বিশ্বাস, অধ্যবসায় আর পরিবর্তনের গল্প। তারা দেখিয়েছে, ছোট পুঁজি দিয়ে শুরু করলেও যদি দৃষ্টি থাকে পরিষ্কার এবং ইচ্ছা থাকে শক্ত, তবে বড় কিছু সম্ভব।

তরুণদের জন্য শিক্ষা

ওয়াইল্ড ওভেনের গল্প শুধু ব্যবসার গল্প নয়। এটা বিশ্বাস, অধ্যবসায় আর পরিবর্তনের গল্প।
বাংলাদেশের তরুণদের জন্য এখান থেকে শেখার অনেক কিছু আছে:

ছোট থেকে শুরু করুন—বড় হওয়ার জন্য বিশাল পুঁজি দরকার নেই।

সংকট মানে সুযোগ—কোভিডের সময়ও তারা নতুন কৌশল নিয়েছিল।

মানের সাথে আপস নয়—গ্রাহকের আস্থা টিকিয়ে রাখতে মান অপরিহার্য।

শেখার মানসিকতা—বড় ভাইয়ের কারখানা থেকে শেখা, অনলাইনে শেখা—সবই কাজে লেগেছে।

‘ওয়াইল্ড ওভেন’ দেখিয়েছে—বড় স্বপ্নের জন্য দরকার শুধু সাহস, অধ্যবসায় এবং শেখার আগ্রহ।
যেখানে অনেকেই থেমে যায়, তারা সেখানে খুঁজেছেন পথ।
তাদের যাত্রা প্রমাণ করে, বাংলাদেশের মাটিতে তৈরি ব্র্যান্ডও হতে পারে আন্তর্জাতিক মানের, শুধু দরকার পরিষ্কার দৃষ্টি আর বিশ্বাস।

তরুণরা যদি এই গল্প থেকে একটি শিক্ষা নেয়, সেটি হলো:
“প্রস্তুত থাকুন, শুরু করুন ছোট থেকে, ব্যর্থতাকে ভয় পাবেন না—সুযোগ দরজায় কড়া নাড়বেই।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular