back to top
সোমবার, আগস্ট ২৫, ২০২৫
HomeInspirationYouth Achieverকুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে Google: খালেদ বিন সাইফুল্লাহর সাফল্যের গল্প

কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে Google: খালেদ বিন সাইফুল্লাহর সাফল্যের গল্প

চট্টগ্রামের কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা শেষ করে যখন প্রযুক্তিগত জীবনের ভোরে পা ফেলেছিলেন খালেদ বিন সাইফুল্লাহ, তখন তার সামনে যে পথ ছিল, সেই পথে গুগলের মতো জায়ান্টে পৌঁছে যাওয়াটা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। কিন্তু এই পথটাই আজ অনুপ্রেরণায় ভরা হয়ে দাঁড়িয়েছে—বিশেষ করে বাংলাদেশের সেই শিক্ষার্থীদের জন্য, যাঁরা বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের (BTEB) প্রোগ্রাম থেকে উত্তরণ করতে উৎসাহ দেখতে পান না।

১. ছোট পদক্ষেপেই শুরু হয় দিল থেকে ইঞ্জিনিয়ার

কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে Uttara University–তে পড়ার সুযোগ—এটাই খালেদের জীবনের প্রথম ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বাঁক। BTEB শিক্ষার্থীদের জন্য মেইনস্ট্রিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের দরজা খোলা—এমন সুযোগ বিরল। সেখানে যাত্রা শুরু হয় নতুন চ্যালেঞ্জের পথে।

২. ল্যাপটপ ছিল না, আত্মবিশ্বাস ছিল

প্রারম্ভে প্রযুক্তিগত জ্ঞান কম ছিল, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকেই উন্নয়ন ও আত্মবিশ্বাস ধরে নেওয়ার পথ গড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন খালেদ। এমনকি PowerPoint প্রেজেন্টেশন তৈরি থেকে শুরু করে টিমে কাজ করার অভিজ্ঞতা—এসব মৌলিক দক্ষতাই ছিল তার ভবিষ্যতের মূল চালিকা শক্তি।

৩. টিমওয়ার্ক শেখানোর ক্লাসে জীবনের সাবক্লাস

পলিটেকনিক থেকে আসা তরুণ হিসেবে, গ্রুপ প্রজেক্টে বা অন্যের সঙ্গে লেয়ার অনুযায়ী কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল সীমিত। কিন্তু আপনার বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর ভিতে নিখুঁত এক পরিবেশ তৈরি করেছিল—যেখানে পারস্পরিক মনোমালিন্য মিটিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করা, সহনশীল হওয়া, নিজের অবস্থান সংযম করে প্রকাশ—এসবই জীবন গড়ার মডেল।

৪. আগে ছিল সিনিয়র কর্পোরেট, এখন–টেক জায়ান্ট

অনেকেই প্রথমে Wells Fargo, Johnson & Johnson, Cigna–র মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলেন। সেখানে প্রতিষ্ঠানের কাঠামো বুঝেছেন, বিভাগীয় সংযোগ এবং পেশাদার মেন্টালিটি নিয়ে পরবর্তী সংস্থায় ঝাঁপ দিয়েছেন। আর তার পরেই গুগলে পৌঁছতে পেরেছেন—যেখানে তার বর্তমান ভূমিকা Test Engineer।

৫. Google Test Engineer–এর দৈনন্দিন রুটিন

আজকের Google–এ, খালেদ নিয়মিত Java ও Python–এ কাজ করেন—অ্যাপের স্মুথ ইউজার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার জন্য ডেভেলপ এবং টেস্ট করতে হয়।

এই ক্ষেত্রে শুধু কোড না, প্রয়োজন আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা তথা Emotional Intelligence–ও। ট্রান্স-ফাংশনাল টিমে, ভিন্ন পটভূমির মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সংঘাত মিটিয়ে সহযোগিতা গড়ে তোলা হয়—বিশেষ করে পারস্পেক্টিভের পার্থক্যগুলোর মাঝে নিজেকে অন্যের চোখে দেখে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া।

৬. “আমার বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রেরকের চাবিকাঠি”

নিজের কথা বলতেই খালেদ মনে করেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশই তাকে সৎভাবে গড়ে তুলেছে। পেশাদার আচরণ, অবশ্যই উপস্থাপনের দক্ষতা, গ্রুপে কাজের শক্তি—এসব কিছুই সে আগে পাননি। সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

৭. বাংলাদেশের শিক্ষার বাস্তব—চ্যালেঞ্জ ফ্রেম থেকে সুযোগ খুঁজতে শিখুন

খালেদের কথা থেকে এক বাস্তবই স্পষ্ট—বাংলাদেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের একাডেমিকভাবে তৈরি করে, কিন্তু আত্মপ্রকাশ ও পেশাগত দক্ষতায় দুর্বল। “অ্যাকাডেমিক সক্ষম, কিন্তু আত্মপ্রকাশে অসমর্থ”—এমন গ্রাজুয়েট তৈরি হয়।

এক্ষেত্রে খালেদের উদাহরণ বিশেষ—তিনি তুলে ধরেছেন কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার বাইরে আরও অনেক দক্ষতা অর্জন করা যায়। যারা ব্যবহার করতে পারে—তারা শেষ পর্যন্ত বড় জায়গায় পৌঁছাতে পারে।

৮. গল্পের সরলতা, শক্তি, এবং অহংকার

খালেদের জীবনের গল্পে একটা সরলতা আছে, যে তাকে সাধারণ করে তোলে, অন্যদিকে অনুপ্রেরণা যোগায়। বড় কোনো কোর্স, বড় কোনো ট্রেনিং ছিল না—ছিল এক বিশ্ববিদ্যালয়, ছিল শেখার ধারাবাহিকতা।

এই কাহিনী শুধু তার নয়—এসবের অনুরণন আমরা দেখতে পাই দেশের অন্যান্য সফল উদাহরণে। সেখানে সূক্ষ্ম শিক্ষা, ক্লাস রুমের বাইরে শেখার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল মূল।

ছোট শুরু থেকে বড় গন্তব্য

খালেদ বিন সাইফুল্লাহর যাত্রা আমাদের শেখায়—বড় স্বপ্ন পূরণের জন্য সবসময় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়, বিপুল অর্থ বা অভিজাত সুযোগ-সুবিধার দরকার হয় না। দরকার শুধু শেখার ইচ্ছা, অধ্যবসায়, আর প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর মানসিকতা।

ডিপ্লোমা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহুজাতিক কোম্পানি, আর সেখান থেকে গুগল—এটা শুধুই একটি ক্যারিয়ার জার্নি নয়, বরং প্রমাণ যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে।

আমরা যারা এখনো পথ খুঁজছি, তাদের জন্য খালেদের গল্প একটাই বার্তা দেয়—“অপেক্ষা নয়, শুরু করুন ছোট থেকে। সমস্যাকে ভয় নয়, সমাধান খুঁজুন। আজকের ছোট পদক্ষেপই কাল আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে গুগলের মতো উচ্চতায়।”

কারণ, শেষ পর্যন্ত সাফল্য কখনো হঠাৎ আসে না—এটা গড়ে ওঠে ধাপে ধাপে, প্রতিদিনের শেখা আর প্রতিদিনের চেষ্টায়। খালেদের মতো প্রত্যেকেই একদিন বলতে পারবে—

“আমি খুঁজিনি শর্টকাট, আমি খুঁজেছি পথ। আর সেই পথই আমাকে এনে দিয়েছে আমার স্বপ্ন।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular