“আজ মনটাও ভালো নেই, চল কেএফসি থেকে কিছু খাই!”
বন্ধুর এই প্রস্তাবটা অচেনা না, তাই না?
মন খারাপ, রাগ, একাকীত্ব, স্ট্রেস—এসব এলেই আমরা হুট করে অর্ডার করে ফেলি একটা বড় সাইজ পিজ্জা বা ফ্রাইড চিকেন। তখন মনে হয়, মশলাদার খাবারটাই বুঝি একমাত্র আনন্দের উৎস!
কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবেছেন—এই “কমফোর্ট ফুড” খাওয়া কি আসলেই আমাদের ইমোশন ঠিক করে? নাকি এটা একধরনের ভ্রান্ত অভ্যাস?
চলুন, আজ আমরা বুঝে নিই—কেন আমরা মন খারাপ থাকলেই ফাস্টফুড খাই, এর পেছনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কী, আর আমরা আসলে কী করলে সত্যিকারের স্বস্তি পাব।
গল্পটা সবারই চেনা
সাদিয়া, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অফিসে হঠাৎ এক প্রেজেন্টেশন খারাপ হলো। বস বকা দিল। মন খারাপ করে তিনি বাসায় ফিরেই অর্ডার করলেন এক্সট্রা চিজ বার্গার, সঙ্গে বড় ফ্রাই আর কোল্ড ড্রিংক।
খাওয়ার পর প্রথম ৫ মিনিট দারুণ লাগলো। কিন্তু কিছুক্ষণ পর মাথাব্যথা, পেট ভার আর আত্মভোলা গ্লানি ফিরে এলো।
এমন অভিজ্ঞতা কি আপনারও হয়েছে? তাহলে আপনি “ইমোশনাল ইটিং” এর শিকার।
কেন স্ট্রেসে থাকলেই আমরা বেশি খাই?
১. খাবার মানেই পুরস্কার!
ছোটবেলায় কান্না করলে মা বলতেন, “চুপ কর, চকলেট খাও।”
তখন থেকেই আমাদের মাথায় গেঁথে গেছে—খারাপ সময় = মজার খাবার।
এটাই পরিণত বয়সে গিয়ে রূপ নেয় ফুড থেরাপিতে।
২. ফাস্টফুড মানেই ইনস্ট্যান্ট রিলিফ
ফাস্টফুডে থাকে প্রচুর চিনি, চর্বি ও লবণ—যা মস্তিষ্কে ডোপামিন (সুখের হরমোন) বাড়িয়ে দেয়।
ফলে অল্প সময়ের জন্য মন ভালো হয়, কিন্তু শরীরের ক্ষতি হয় দীর্ঘমেয়াদে।
৩. স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসল আমাদের ক্ষুধা বাড়ায়
স্ট্রেসে থাকলে কোর্টিসল বেড়ে যায়, যেটা মস্তিষ্কে ক্যালোরি-রিচ ফুড চায়। তাই তখন সালাদ নয়, লাগে ফ্রাইড চিকেন!
কী সমস্যা হয় এই “ইমোশনাল ইটিং” এ?
- ওজন বাড়ে, অথচ মন ঠিক হয় না
- খাওয়ার পর গিল্টি ফিল হয়
- শরীরে ইনফ্লেমেশন বাড়ে
- ঘুমে সমস্যা হয়
- পরবর্তী সময়ে আরও বেশি ফুড ক্রেভ হয়
এই একধরনের “emotional eating cycle”—যা আমাদেরকে একসঙ্গে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল করে।
তাহলে কি খুশি হওয়ার উপায় নেই?
আছে! তবে খাবারের মাধ্যমে নয়, বরং নিজের ইমোশন বোঝার মাধ্যমে।
চলুন জেনে নিই কিছু কার্যকর বিকল্প অভ্যাস—
ফাস্টফুড নয়, নিজেকে হ্যান্ডেল করুন ৫টি পজিটিভ অভ্যাসে
১.“খাবার-ডায়েরি” রাখুন
- কখন বেশি খেতে ইচ্ছা করে?
- তখন আপনার অনুভূতি কী ছিল?
লিখলে আপনি বুঝবেন—আপনার খিদে শরীরের না, মনে!
২. বিকল্প খুঁজুন
স্ট্রেসে থাকলে ১০ মিনিট হাঁটুন, গান শুনুন, বা এক কাপ গ্রিন টি খান।
মুখ ব্যস্ত থাকলেই খাবার খেতে হবে এমন নয়।
৩. কাউকে ফোন দিন
অভিমান বা একাকীত্ব থেকে খাওয়ার ইচ্ছা বাড়ে। তখন একজন বন্ধু বা ভাইবোনকে ফোন দিলে মন হালকা হয়।
৪. ধ্যান বা গভীর নিঃশ্বাসের চর্চা
মাত্র ৩ মিনিট “ব্রেথিং এক্সারসাইজ” মন শান্ত করতে পারে খাবারের চেয়ে বেশি!
৫.“কমফোর্ট ফুড” কে বদলান “স্মার্ট ফুড” এ
- অল্প বাদাম, ডার্ক চকোলেট
- গ্রিন স্মুদি
- কলা বা ওটস—এই খাবারগুলো মন ভালো করে, কিন্তু শরীরে চাপ দেয় না।
আপনার মন খারাপের চিকিৎসা পিজ্জা নয়
মন খারাপ হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—
- আমি কি আসলেই ক্ষুধার্ত?
- নাকি মনটা একটু ভেঙে পড়েছে?
আপনি খাবার খেতে পারেন—কিন্তু অনুভূতি চেপে রাখতে নয়। বরং বুঝে, ভালোভাবে মোকাবিলা করতে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা: নুসরাতের গল্প
নুসরাত, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তিনি বলেন—
“আগে আমি টেনশনে থাকলেই খেতাম চিকেন রোল। পরে যখন ওজন বেড়ে গেল, আত্মবিশ্বাস কমে গেল—তখন বুঝলাম, এটা সমাধান নয়। এখন আমি স্ট্রেস হলে হাঁটি, গান শুনি, আর অল্প হেলদি কিছু খাই।”
তার কথায় একদম পরিষ্কার: আবেগ চাপা দেওয়ার চেয়ে সেটা মোকাবিলা করাই সবচেয়ে ভালো।
আজকের ছোট্ট সিদ্ধান্ত, আগামীর বড় পরিবর্তন
- একদিনেই অভ্যাস বদলায় না।
- কিন্তু আজ যদি আপনি বুঝে খান, তাহলে কাল আর “ইমোশনাল ইটিং”-এ পড়ে যাবেন না।
আপনার মন এক গ্লাস পানিতে শান্ত হতে পারে। অথবা ৫ মিনিট চোখ বন্ধ রাখলে।
নিজেকে ভালোবাসুন, বুঝুন, এবং খাবার দিয়ে নয়—ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে ভরান।