আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি খেয়েছেন তো?
যদি না খেয়ে থাকেন তবে অভ্যাস করে নিন কাল থেকে রোজ ঘুম থেকে উঠে পানি খাওয়ার। যথেষ্ট পরিমাণ পানি খাওয়া শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এটা আমরা সবাই জানি। তবে পানি খাওয়ারও আছে কিছু বিশেষ নিয়ম। তার মধ্যেই একটি হল ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি খাওয়া। কিন্তু কেন? তার উত্তরই আমরা এখন জেনে নেব।
(১) ত্বক হবে উজ্জ্বল ও সুন্দর :
সুন্দর ত্বক কে না চায় বলুন? ত্বকের যত্ন নিতে আমরা কত কিছুই না করি! কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খেলে এতো যত্ন করেও শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয় না। কারন শরীরের ভেতর বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হওয়া বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করতে সাহায্য করে এই পানি। আমরা যখন রাতে ঘুমাই তখন আমাদের শরীর নিজেই নিজেকে মেরামতের কাজ করে। বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হয় বর্জ্য। ঘুম থেকে উঠে পানি খেলে এই বর্জ্যগুলো সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তাই ত্বক অনেক বেশি সুস্থ এবং উজ্জ্বল দেখায়। আর একই সাথে দেহে নতুন কোষ এবং মাংসপেশী তৈরি করতেও লাগে অনেক পানি। সকালে পানি পান করলে আপনার দেহে নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর তাই মৃত কোষ দূর হয়ে ত্বক হয়ে ওঠে আরো সতেজ।
(২) সহজেই কমবে ওজন :
যারা ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমাতে চান, তারা অবশ্যই সকালে উঠে পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন সকালে অন্তত ১৬ আউন্স কুসুম গরম পানি খেলে শরীরের মেটাবলিজম ২৪% বৃদ্ধি পায়। আর হজম শক্তি বাড়া মানেই শরীরে ফ্যাট জমতে না দেওয়া। কষ্ট করে না খেয়ে থেকে ওজন কমানোর বদলে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার এবং সাথে সকালবেলা খালি পেটে এক গ্লাস পান – সহজ এবং উপকারি। তবে সকালে পানির বদলে জুস বা অন্য পানীয় না খাওয়াই ভালো।
(৩) কমবে পানিশুন্যতা :
আমাদের দেহের কোষ গঠন, খাবার হজম করা থেকে শুরু করে প্রতিটি অভ্যন্তরীণ কাজেই দরকার হয় পানি। যে ৬-৭ ঘন্টা আপনি ঘুমিয়ে থাকেন তখনও কিন্তু দেহের এই ক্রিয়া-বিক্রিয়া থেমে থাকে না। ফলে খরচ হয়ে যায় অনেক পানি। আর সকালে আমরা সেই পানির অভাব নিয়েই জেগে উঠি। তাই ঘুম থেকে উঠে পানি পান করা অনেক জরুরি। এতে আমাদের দেহের পানির অভাব অনেকটাই দূর হবে।
(৪) দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য :
কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার অন্যতম কারন পানি কম খাওয়া। কারন স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া বহাল রাখার জন্য দরকার পানি। রাতে ঘুমানোর কারনে দীর্ঘ সময় আমাদের দেহে পানি প্রবেশ করে না। ফলে হজম প্রক্রিয়ার সচলতা কমে যায়। তাই সকালে উঠে এক গ্লাস পানি খাওয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সচল করে নিতে পারেন। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয় থাকবে না। আর গ্যস্ট্রিকের সমস্যাও কমে যাবে অনেকটা।
(৫) মস্তিষ্ক হবে সচল :
মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকলে মস্তিষ্ক আরো দ্রুত সচল হয়। আমরা সবাই জানি, রক্তের একটা বড় অংশ পানি। সকালে উঠে পানি খেলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচন বাড়ে। ফলে আপনার মস্তিষ্ক হয়ে উঠবে চাঙ্গা।
ঘুম থেকে উঠে অনেকের মাথা ব্যথা করে। উঠার পর পানি খেলে মাথা ব্যথাও অনেকটা কমে যায়।
(৬) কমবে অন্যান্য রোগও :
প্রতিদিন সকালে মাত্র এক গ্লাস পানি খেলে বমি ভাব, গলার সমস্যা, মাসিকের সমস্যা, ডায়রিয়া, কিডনির সমস্যা, আর্থাইটিস, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি অসুখ কমাতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও নতুন রক্তকোষ এবং পেশীকোষ জন্মানোর প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে পানি।
ঘুম থেকে জেগেই পানি পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়া এবং মূত্রথলির ইনফেকশন হওয়া প্রতিরোধ করে। খালি পেটে পানি পান করলে পাকস্থলির এসিড পাতলা হতে সাহায্য করে। এই এসিড কিডনির পাথর সৃষ্টির জন্য দায়ী। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে টক্সিনের দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের ব্লাডার ইনফেকশন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে কমপক্ষে এক গ্লাস পানি পান করুন। পানি খাওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে কোনো কিছু না খাওয়াই ভালো। দুপুরের এবং রাতের খাবারের ২ ঘন্টার মাঝে পানি খাওয়া উচিত না। একজন সুস্থ মানুষের দিনে কমপক্ষে ২ লিটার পানি খাওয়া উচিত। তবে জীবনযাপনের ধরন এবং ঋতুর উপর নির্ভর করে পানির প্রয়োজনীয়তা কম বেশি হতে পারে। নিয়ম মেনে ঠিকমত পানি পান করলেই শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দূর হয়ে যাবে অনেক সহজে।